পাতা:জয়তু নেতাজী.djvu/১৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নেতাজী
১০৭

কেবল ধর্ম্মগুরুর আদেশ পালন করিবে। স্বাধীনতারূপ যে লক্ষ্য তাহার প্রতি দৃষ্টি রক্ষা করারও আবশ্যকতা নাই—সে ভার গুরুর; পাছে সংগ্রামের চিন্তা থাকে, তাই মনকে দমন করিবার জন্য, তাহারা অহিংসার মন্ত্র জপ করিবে এবং হাত-পাগুলাকে শান্ত ও সংযত রাখিবার জন্য স্থির হইয়া চরকা ঘুরাইবে। তাহা হইলেই স্বাধীনতা আপনা-আপনি আসিয়া পড়িবে। কেবল গুরুর আজ্ঞা পালন করিলেই এমন একটি অবস্থার উদ্ভব হইবে যে, ইংরেজ ভারত-রাজ্য ছাড়িয়া দিতে বাধ্য হইবে।[১] উপায় ও লক্ষ্যের মধ্যে বাস্তব-সম্পর্ক কি, তাহা সাধারণ বুদ্ধির অগোচর বলিয়াই, গুরুবাক্যে অচল বিশ্বাস রাখা চাই। গান্ধীজী এখন আর নেতা নহেন, তিনি ধর্ম্মগুরু হইয়া জাগ্রত জনগণের সেই স্বাধীনতা-পিপাসাকে, তাহাদের হৃদয়-মনের সেই উৎসাহকে,—দেশপ্রেমের সেই অপূর্ব্ব উন্মাদনাকে, সাহস-শৌর্য্য পুরুষোচিত কর্ম্ম-স্পৃহাকে নির্ব্বাপিত করিয়া দিলেন। কারণ, তাঁহার ঐ ধর্ম্মোপদেশের মূল মন্ত্রই হইল-আত্ম-সংবরণ, আত্মসংকোচ বা আত্ম-সম্মোহন। ইহাতে পূর্ব্বের সেই ভাবস্রোত প্রথমে উজানে বহিল; কিন্তু ক্রমেই ধর্ম্মে ও কর্ম্মে, লক্ষ্যে ও উপায়-নির্দ্দেশে যে একটি দুর্ব্বোধ্য ব্যবধানকে মানিয়াও অস্বীকার করিতে হয়, তাহাতেই সেই বিরাট বাহিনী ভিতরে ভিতরে বিমূঢ় হইয়া উঠিল; উপরের ঠাট বজায় রহিল, কিন্তু তাহার মেরুদণ্ডে ঘুণ ধরিল; সেই গান্ধীধর্ম্মের বুলি ও বেশ আত্ম-


  1. পরিশিষ্টে “গান্ধী ও গান্ধী-কংগ্রেস সম্পর্কে সুভাষচন্দ্র” দ্রষ্টব্য।