পাতা:জয়তু নেতাজী.djvu/১৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

৸৵৹

ভারতীয় ধর্ম্মের সুস্থ ও প্রাণময় প্রেরণা উহাতে নাই; উহা প্রাণধর্ম্মী, গতিধর্ম্মী নয়; উহার মূলে আছে সেই মধ্যযুগীয় mysticism―জীবন-সত্যকে অগ্রাহ্য় করিয়া একটা অবাস্তব ভাব-সাধনার মোহ, গীতা যাহাকে ‘ক্লৈব্য' বলিয়াছেন সেই ক্লৈব্যেরই জয়গান। একমাত্র মহারাষ্ট্রের বালগঙ্গাধর তিলক বাংলার এই নবজাগরণকে শ্রদ্ধার চক্ষে দেখিয়াছিলেন, তিনি এই ধর্ম্মের সমর্থন করিয়াছিলেন। তাঁহার গীতাভাষ্য―সেই ‘গীতা-রহস্য’ নামক বিশাল গ্রন্থে, তিনি হিন্দুধর্ম্মের যে ব্যাখ্যা করিয়াছেন তাহাতেও সেই ধর্ম্মকে―‘নিবৃত্তিপর’ নয়―‘প্রবৃত্তিপর’ বলিয়া প্রমাণিত করিয়াছেন; তিনি শ্রীকৃষ্ণের ‘তস্মাৎ যুধ্যস্ব ভারত’ এই উপদেশকে মধ্যযুগীয় ভক্তি-বৈরাগ্যের দুর্ব্যাখ্যা হইতে মুক্ত করিয়াছেন।

 বাংলাদেশেই সর্ব্বপ্রথম রাজনৈতিক বিক্ষোভ আরম্ভ হয়, তাহার মূলে ছিল বঙ্কিম-বিবেকানন্দের বাণী। সেই নবধর্ম্মাবেগের আঘাতে আদি-কংগ্রেস ভাঙিতে আরম্ভ করে; সেই সময়েই বাঙালীর সেই ধর্ম্মমন্ত্র বীজরূপে ভারতের সর্ব্বত্র ছড়াইয়া পড়ে, এবং ক্ষেত্রবিশেষে তাহা অঙ্কুরিত হয়। তখন হইতেই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম প্রকৃতপক্ষে আরম্ভ হয়। ব্রিটিশ কর্ত্তৃপক্ষও রীতিমত চঞ্চল হইয়া উঠে; এবং তখন হইতেই একদিকে যতরকমের তথাকথিত reforms এবং অপরদিকে কঠোর দমন-নীতি তাহাদের রাজ্যরক্ষার প্রধান উপায় হইয়া আছে। প্রথম মহাযুদ্ধের পর, পৃথিবীর সকল দেশের মত, এদেশেও বিষম অবস্থান্তর ও অবসাদ ঘটে। সেই লগ্নে গান্ধীজী তাঁহার নূতন ধর্ম্ম ও নূতন কর্ম্মনীতি লইয়া ভারতের রাজনীতি-ক্ষেত্রে আবির্ভূত হইলেন; সেই দারুণ অবসাদ ও নিরাশ তাঁহার নেতৃত্বের বড়ই অনুকুল হইয়াছিল, তিনি হইয়াছিলেন—‘The man of the moment’। সেই