পাতা:জয়তু নেতাজী.djvu/২৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট
১৯৩

অভিপ্রায় সম্বন্ধে কিছুমাত্র সন্দেহ থাকে না; সে বিষয়ে গান্ধী কখনও তাঁহার সংকল্প হইতে কিছুমাত্র বিচলিত হন নাই। সেই সংকল্পসাধনের জন্যই তিনি সেই ১৯১৯ হইতে ১৯৪৬ পর্য্যন্ত, এক এক অবস্থায় এক এক পক্ষকে পরাস্ত করিতে―কখনাে দ্ব্যর্থপূর্ণ উক্তি, কখনাে স্তোকবাক্য, কখনও ভগবদুক্তি (voice of God), কখনাে বা স্পষ্ট-বাক্য ব্যবহার করিয়াছেন; একদিকে জনগণের অন্ধভক্তি অটুট রাখিবার জন্য যত-কিছু আনুষ্ঠানিক নিত্যকর্ম্ম, অপরদিকে জাতীয়তাবাদী বিপ্লবীদিগকে নিরস্ত ও নিষ্ফল করিবার জন্য কুটনীতির চূড়ান্ত করিয়াছিলেন। এই সকল কথাই সুভাষচন্দ্রের গ্রন্থে আছে, কিন্তু তৎসত্ত্বেও তিনি গান্ধীজীকে অবিশ্বাস করিতে পারেন নাই। তিনি গান্ধীকে একজন সরল-বুদ্ধি, রাজনীতি-অনভিজ্ঞ, আত্মপ্রত্যয়শীল ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ পুরুষ বলিয়াই বুঝিয়াছিলেন, এবং গান্ধীর নিজস্ব কূটনীতির সেই অভ্রান্ত প্রয়ােগ-কৌশলকেও তাঁহার নিদারুণ বুদ্ধিভ্রম বলিয়া দুঃখ প্রকাশ করিয়াছেন। এই গ্রন্থ রচিত হয় ১৩৩৪ সালে, তখনও ত্রিপুরীকংগ্রেসের সেই কুৎসিত ষড়যন্ত্র ও উলঙ্গ তাণ্ডব অনুষ্ঠিত হয় নাই। কিন্তু তাহার পরে সুভাষচন্দ্রের হৃদয়ে যে লৌহ-শলাকা প্রবেশ করিয়াছিল, তাহাতে মর্ম্মাহত হইলেও তিনি গান্ধীর সাধুতা সম্বন্ধে আস্থা হারান নাই। এই গ্রন্থে যে একটি ধারণা বারবার প্রকাশ পাইয়াছে তাহা এই যে, গান্ধীর মস্তিষ্ক-শক্তি (Intellect) নিম্নস্তরের বলিয়া তিনি ঐ সকল ভ্রান্তির বশবর্ত্তী হইয়াছিলেন; চিত্তরঞ্জন, মতিলাল বা লাজপত রায় বাঁচিয়া থাকিলে তাঁহারা তাঁহার বুদ্ধিকে ঠিক পথে পরিচালিত করিয়া ঐরূপ ভ্রান্তি হইতে রক্ষা করিতেন। সুভাষচন্দ্র যেন শেষ পর্য্যন্ত ইহাই ভারতের সবচেয়ে দুর্ভাগ্য বলিয়া দারুণ দুঃখ পাইয়াছিলেন যে,―এতবড় মহাপ্রাণ, সাধু ও সত্যনিষ্ঠ পুরুষের দ্বারাও

 ১৩