পাতা:জয়তু নেতাজী.djvu/২৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট
১৯৯

এই ব্রিটিশ-প্রীতি যে কেন―অহিংসা নয়, শুধু ধর্ম্মরূপেও নয়―একটা অতি গূঢ়-গভীর উদ্দেশ্যসাধনের উপায়রূপে বড় কার্য্যকরী হইয়াছিল, সুভাষচন্দ্র তাহা বুঝিতে পারেন নাই; আজ হয়তো তাহা দিবালোকের মতই দেখিতে পাইতেন; আমরাও পরে তাহা দেখিব। অতি অল্পকালের মধ্যেই গান্ধী দেশবাসীগণের চিত্ত ভিন্নপথে আকৃষ্ট করিতে সমর্থ হইলেন। ইহা আদৌ আশ্চর্য্যের বিষয় নহে, ভারতবাসী জনগণের চিত্তে ঐ ভাব সহস্ৰ বৎসরে মজ্জাগত হইয়া আছে; আজিও,―শুধু অশিক্ষিত নয়, শিক্ষিত ভারতবাসীর মধ্যে যাঁহারা ধর্ম্মপিপাসু―রাজনীতি, বা দেশ ও জাতির কল্যাণ চিন্তা যাঁহাদের সুখনিদ্রার কিছুমাত্র ব্যাঘাত করে না―সেইরূপ সুপণ্ডিত ও ধার্ম্মিক ব্যক্তিগণ গান্ধীমহাত্মাকে মহাপুরুষ বলিয়াই অসীম ভক্তিভরে প্রণাম করিয়া থাকেন। হিন্দুর ধর্ম্মজীবনে এইরূপ দাস্য-ভাব লক্ষ্য করিয়াই ভারতীয় মুসলীমসম্প্রদায় হিন্দুকে কিছুতেই শ্রদ্ধা করিতে পারে না―দাস-জাতি বলিয়া অতিশয় ঘৃণা করে। ইহাতে হিন্দুর কিছুমাত্র ক্ষোভ নাই―বরং গর্ব্বই আছে; কারণ এরূপ দাস্যভাবের সাধনাকে―দুর্ব্বল, ক্ষীণপ্রাণের ঐ তামসিক মনোভাবকেই―অতি উচ্চ সাত্ত্বিকতার নাম দিয়া তাহারা বহুকাল যাবৎ পরম আত্মপ্রসাদ লাভ করিতেছে। স্বামী বিবেকানন্দ ইহাই দূর করিতে চাহিয়াছিলেন।

 কিন্তু তৎসত্ত্বেও স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীদের নানা দল গান্ধীকে মানিবে না, মাঝে মাঝে তাহাদের উপদ্রবময় অভিযান তাঁহার আশঙ্কা বৃদ্ধি করে; তখন মহাত্মা একদিকে তাঁহার মাহাত্ম্য এবং অপরদিকে তাঁহার অসাধারণ কুটবুদ্ধির স্বারা কংগ্রেসের ভিতরে ও বাহিরে সকল বিক্ষোভ শান্ত, অর্থাৎ নিষ্ফল করিয়া দিতেন। এই গ্রন্থে তাহার কয়েকটি চমৎকার দৃষ্টান্ত আছে, পরে উদ্ধৃত করিব। অনশনে প্রাণ-ত্যাগ