পাতা:জয়তু নেতাজী.djvu/২৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২২
জয়তু নেতাজী

সুভাষচন্দ্র যাহা জানিয়াও বিশ্বাস করিতে চাহেন নাই, আমি তাহাই স্পষ্ট করিয়া তুলিতেছি। এখন সেই কথাই বলি।

 গান্ধীর আবির্ভাবের পূর্ব্বে ভারতে যে স্বাধীনতা-আন্দোলন এবং পরে যে বিপ্লববাদ দেখা দিয়াছিল, তিনি তাহার কোনটাকেই সুচক্ষে দেখেন নাই। তাঁহার অন্তরে ঐরূপ আন্দোলনের পরিবর্ত্তে অন্যরূপ একটা কর্ম্মনীতির প্রেরণা বোধ হয় অনেক পূর্ব্বেই উদয় হইয়াছিল―দক্ষিণ আফ্রিকার ভারতীয়গণের জন্য সেই কর্ম্মপদ্ধতি অবলম্বন করিয়। তিনি যেটুকু সাফল্য লাভ করিয়াছিলেন, তাহা হইতেই দৃঢ় বিশ্বাস হইয়াছিল―উহাই প্রকৃষ্ট পন্থা; শেষে তাহাই ঈশ্বরের আদেশ বা ‘Voice of God’ হইয়া উঠিয়াছিল। এইরূপে প্রথম হইতেই রাজনীতির সহিত ধৰ্মবিশ্বাস যুক্ত হইয়া তাঁহাকে বাস্তবের প্রতি অন্ধ করিয়া তুলিয়াছিল। যে পাশ্চাত্যের ঘোরতর রাজসিক প্রবৃত্তিকে যীশুর ধর্ম্মমন্ত্রও নিরস্ত করিতে পারে নাই এবং যে কঠিন রাষ্ট্রীয় কূটনীতিকে কুটতর করিয়া ঐ সাম্রাজ্যলোলুপ জাতি পৃথিবী গ্রাস করিতে কৃতসংকল্প হইয়াছে― যাহাদের লোভের অন্ত নাই, তিনি সেই ব্রিটিশ জাতির সম্মুখে মধ্যযুগীয় ভারতের সাধু সন্তদের বেশে ন্যায়, ধর্ম্ম ও করুণার দোহাই দিয়া দাঁড়াইলেন। এইরূপ বিশ্বাসের আরও কারণ ছিল; প্রথমতঃ, তাঁহার মজ্জাগত জৈনধর্ম্মের সংস্কার দ্বিতীয়তঃ, জন্মগত বৈশ্য-ভাব। তিনি যেমন ব্রাহ্মণোচিত ব্রহ্মনিষ্ঠার বশে পূর্ণের বা পরম বস্তুর আকাঙ্ক্ষা করেন নাই (এখানে ‘পূর্ণ-স্বাধীনতা’),―ব্রহ্মনিষ্ঠার পরিবর্ত্তে সুবিধাবাদ, অর্থাৎ লাভ-ক্ষতির একটা হিসাব করিয়া মিটমাটের অধিকতর পক্ষপাতী ছিলেন, তেমনই ক্ষত্রিয়োচিত বীর্য্য (শুধুই নির্ভীকতা নয়) ও যাহাকে ‘ঈশ্বর-ভাব’ বলে তাহা তাঁহার ছিল না; দান অপেক্ষা গ্রহণে তাঁহার চিত্ত উন্মুখ ছিল। এই জৈনধর্ম্ম-সংস্কার ও