পাতা:জয়তু নেতাজী.djvu/২৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট
২২৩

বৈশ্য-মনোবৃত্তির জন্য তিনি ব্রিটিশ রাজশক্তিকে মনে মনে অতিশয় শ্রদ্ধা করিতেন; তাহাদের সেই রাজসিক বা রাজকীয় দৌরাত্ম্য তাঁহাকে বিদ্বেষভাবাপন্ন করিতে পারে নাই। রাজশক্তির সহিত বৈশ্য-বুদ্ধির একটা স্বভাব-মৈত্রী আছে―সর্ব্বদেশে ও সর্ব্বযুগে। বৈশ্য জানে, সে রাজ্য-শাসন করিতে পারিবে না; এবং ঐ রাজশক্তির বা প্রভু-ধর্ম্মের আশ্রয় ব্যতিরেকে তাহার ধর্ম্মও সে পালন করিতে পারিবে না। ইহার উপর, গান্ধী স্পষ্টই দেখিতে পাইয়াছিলেন―সে দৃষ্টি অৰ্দ্ধ সত্য হইলেও, ভারতের গত-যুগের অবস্থা ও অভিজ্ঞতার দিক দিয়া পুর্ণ সত্য―যে, ভারতবাসী জনগণ পাশ্চাত্য স্বাধীনতার মর্ম্ম বুঝে না তাহারা তাহা কামনাও করে না; তাহাদের রাজনৈতিক সংস্কার নাই বলিলেই হয়। রাজা তাহাদের চাই,― একটা প্রভুশক্তির পূজা করিতে না পাইলে তাহারা নিশ্চিন্ত হইতে পারে না; কেবল, সেই রাজাকে একটু প্রজারঞ্জক ও দয়ালু হইতে হইবে। ইহা যে কত সত্য, তাহ বর্ত্তমানে ভারতে যে প্রজাতন্ত্র ও জাতীয়ত-ধর্ম্মী শাসন প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে, সেই অপূর্ব্ব সাধারণ-তন্ত্রের প্রতি জনগণের―শিক্ষিতগণেরও―গভীর অনুরক্তি হইতেই প্রমাণিত হয়। এইরূপ রাজভক্তি―অর্থাৎ শক্তিমানের প্রতি অন্তরের প্রণতি-নিবেদন―ভারতবাসী জনসাধারণের মজ্জাগত। এক্ষণে ঐ মজ্জাগত সংস্কারকে নানা যুক্তি ও তত্ত্বকথায় ঢাকিয়া তথাকথিত স্বাধীনতা-ধর্ম্মী শিক্ষিত-সম্প্রদায় কোনরূপে আত্মপ্রসাদ লাভ করিতেছে। গান্ধী বুঝিয়াছিলেন, এই জাতির চিত্তে সেই মজ্জাগত প্রবৃত্তিকে দমন করিয়া, রাজভক্তির পরিবর্ত্তে, কেবলমাত্র ব্রিটিশ-বিদ্বেষ উদ্দীপিত করিলে তাহার সমূহ অকল্যাণ হইবে― কারণ, ব্রিটিশ-বিদ্বেষ ও স্বাধীনতার আকাঙ্খা এক বস্তু নয়; বিলাতী আদর্শের স্বাধীনতা ভারতের পক্ষে ঘোরতর পরধর্ম্ম। অতএব যাহারা ব্রিটিশ-বিদ্বেষের