পাতা:জয়তু নেতাজী.djvu/২৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট
২২৯

করিতেন না; ইহার বহু দৃষ্টান্ত সুভাষচন্দ্রের গ্রন্থে আছে। সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত ত্রিপুরীর যুদ্ধ, কিন্তু তখনও তাহা ঘটে নাই। কিন্তু প্রথম হইতেই তিনি এক দিব্যবুদ্ধি ধারণ করিয়াছিলেন, সেই বুদ্ধির বলে তিনি একই কালে ‘মহাত্মা’ এবং ‘Father of the Nation’ হইতে পারিয়াছিলেন; পূর্ব্বে সে কথা বলিয়াছি, তাহাই গান্ধীর শ্রেষ্ঠ সাধনা ও সিদ্ধিলাভ। তিনি শিক্ষিত, বুদ্ধিমান, চিন্তাশীল ভারতীয়গণকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করিয়া―সরল, অশিক্ষিত ও ভক্তিপরায়ণ হিন্দু জনসাধারণকে বশীভূত করিয়াছিলেন। গান্ধী জানিতেন, কোন্ কথায়, কেমন বেশ ও কেমন আচরণে তাহারা একদিনে সাড়া দিবে, ভক্তিভরে লুটাইয়া পড়িবে; ঐ ভক্তিই তাহাদের স্বভাব-ধর্ম্ম, স্বাধীনতার মর্ম্ম উহারা কি বুঝিবে? ইংরেজের প্রতি বিদ্বেষ ছাড়া উহারা আর কিছুই বুঝে না। অতএব, সেই ইংরেজ বিদ্বেষকেই ঘুরাইয়া আর এক পথে তাহাদের পিপাসা মিটাইয়া, একদিকে তাঁহার অভিপ্রায়সিদ্ধিও যেমন হইবে, তেমনই সেই বিপ্লবী ব্রিটিশবিরোধীদিগকে নেতৃত্বচ্যুত করা যাইবে। ইহার জন্য ঐ অহিংসা-মন্ত্রের মত সর্ব্বার্থসিদ্ধির মন্ত্র আর নাই; হিন্দুর অহিংসা নয়―জৈনপন্থীর অহিংসাই এবার বড় কাজে লাগিল। এমনই করিয়া গান্ধী শিক্ষিত ভারতবাসীর বিরুদ্ধে (ব্রিটিশের বিরুদ্ধে নয়) যে সংগ্রাম শুরু করিলেন, তাহাতে অতি অল্পদিনেই আশ্চর্য সুফল ফলিল। শিক্ষিতগণও শেষে সেই প্রবল বন্যা রোধ করিতে না পারিয়া তাহাতেই ভাসিয়া ও ডুবিয়া ঐ গান্ধীনীতিকে জয়যুক্ত করিল। ১৯২০ হইতে ১৯৩০ পর্য্যন্ত এই দশবৎসরে গান্ধী তাঁহার আসল যুদ্ধে সম্পূর্ণ জয়লাভ করিলেন। তখন এমন অবস্থা হইয়াছে যে, ভারতের জনগণ আর স্বাধীনতার চিন্তা করে না, সে চিন্তার ভার তাহারা গান্ধীর উপরে দিয়া নিশ্চিন্ত হইয়াছে―অন্ধভাবে তাঁহার আদেশ পালন করাই হইয়াছে