পাতা:জয়তু নেতাজী.djvu/২৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট
২৪৫

রাজনৈতিক বিক্ষোভের কালে তিনি জনগণকে বাধ্য এবং তদানীন্তন নেতৃগণের বিরুদ্ধতা নিবারণ করিবার জন্য, ব্রিটিশ রাজশক্তির সহিত সংগ্রামে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন―সেই সংগ্রাম কেমন তাহা আমরা দেখিয়াছি। তথাপি প্রথম দশবৎসর তিনি ঐরূপ সংগ্রামের সুফল প্রত্যাশা করিয়াছিলেন, এবং সেই নীতিও ত্যাগ করেন নাই। কিন্তু শেষে যখন বুঝিতে পারিলেন, ঐ সংগ্রাম বৃথা―ব্রিটিশ তাঁহার সদভিসন্ধি বুঝিল না; এবং যখন দেখিলেন, আর একদিকে তাঁহার সিদ্ধিলাভ হইয়াছে, অর্থাৎ জনগণ তাঁহাকে মহাত্মারূপে বরণ করিয়াছে―রাজনীতি অপেক্ষা ধর্ম্মনীতিই তাহদের প্রাণ-মন হরণ করিয়াছে, তখন তিনি তাঁহার হৃদিস্থিত হৃষিকেশকে, সেই Voice of God-কেই একান্ত করিয়া আশ্রয় করিলেন। ব্রিটিশের সহিত যুদ্ধ নয়, ভারতবাসী জনগণেরই উদ্ধারসাধন নয়,―পৃথিবীতে এক নবধর্ম্মের প্রচার ও প্রতিষ্ঠাই তাঁহার ভগবৎ-নির্দিষ্ট কর্ম্ম হইয়া দাঁড়াইল। তাঁহার দৃষ্টি ভারতের গণ্ডি অতিক্রম করিয়া পৃথিবীর চতুষ্প্রান্তে প্রসারিত হইল―তিনি ভারতবাসীর সেই রাজনৈতিক সংকট, দারুণ দারিদ্র্য ও দুর্গতি প্রভৃতির প্রতিকার-চিন্তাকে এমন একটি আধ্যাত্মিক উচ্চ আদর্শে মণ্ডিত করিয়া লইলেন (এই আদর্শ পূর্ব্ব হইতেই ছিল) ষে, অতঃপর যাহা কিছু করিতে লাগিলেন, তাহাতে আশু দুৰ্গতি-নিবারণের কোন সম্ভাবনাই রহিল না, বরং শেষে সেই দুৰ্গতি অতি ভীষণ আকার ধারণ করিল; কিন্তু তাহাতেই তাঁহার ধর্ম্মমন্ত্রের গৌরব বৃদ্ধি পাইল―তাহা এক সার্ব্বভৌমিক মানব-প্রেমের দাবিতে ভারতকে ছাড়াইয়া বিশ্বের শুশ্রূষা ও শ্রদ্ধার ষোগ্য হইতে চাহিল। ভারতকে ছাড়াইয়াই তাহা হইবে―কারণ, গান্ধী ইহা নিশ্চয়ই চিন্তা করিয়াছিলেন, তাঁহার ঐ ধর্ম্ম এই অধঃপতিত, দুর্ব্বল, নির্জ্জীব ভারত পালন করিতে পরিবে না;