২
স্বামীজীর দেশপ্রেমের কথা বলিয়াছি, সেই প্রেমের মূল কোথায় তাহাও বলিয়াছি। এক্ষণে, তাঁহার সেই আদর্শ বা নীতি যে ভ্রান্ত নয়, এবং তাহাই যে আপন নিয়মে যথাকালে নেতাজী সুভাষচন্দ্রের মধ্যে পূর্ণ ও নিঃসংশয়রূপে প্রকাশমান হইয়াছে, তাহা বুঝিতে হইলে স্বামীজীর সেই মন্ত্রটিকে আর একটু ভাল করিয়া অবধারণ করিতে হইবে। আমাদের ধর্ম্মশাস্ত্রে পতিতআত্মার উদ্ধার নানা উপায়ে হওয়ার বিধি ও উপদেশ আছে―ভক্তি-শাস্ত্রে তাহা একরূপ, শক্তি-শাস্ত্রে তাহা অন্যরূপ। শেষে পৌরাণিক ভাগবত-ধর্ম্মই প্রবল ও লােকায়ত হইয়া উঠিয়াছিল; উহা মূলে ভক্তিমার্গ; ভগবানে আত্মসমর্পণ, আত্মার দৈন্য বা পাপ-স্বীকারই উহার মুক্তিতত্ত্ব। স্বামীজী প্রথম হইতেই ইহার প্রতি শ্রদ্ধান্বিত ছিলেন না, তাঁহার অধ্যাত্ম-পিপাসা ও অন্তর-প্রকৃতি ছিল ইহার বিপরীত। পরে, দেশের ঐ দারুণ দুরবস্থাদর্শনে, তাঁহার সেই স্বকীয় অধ্যাত্ম-দৃষ্টিই আরও নিঃসংশয় হইয়া উঠিল; জাতির উদ্ধারকল্পে, ভক্তি নয়―শক্তিকেই তিনি একমাত্র সাধন-পন্থা বলিয়া দৃঢ়-নিশ্চয় করিলেন। তত্ত্ব বা সাধনমার্গ হিসাবে ভক্তির মূল্য যেমনই হৌক, উহা যে এ যুগের ঐ সঙ্কটে শুধুই নিরর্থক নয়―বরং ক্ষতিকর, এবং শক্তিই যে একমাত্র সত্য-মন্ত্র, তাই তিনি যে-দৃষ্টির দ্বারা উপলব্ধি করিয়া-