পাতা:জাতীয় আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ - প্রফুল্লকুমার সরকার (১৯৪৭).pdf/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

৷৹

ভারতে মধ্য যুগের ধর্মসংস্কার আন্দোলন, বাঙলা দেশের পাল ও সেন যুগের সভ্যতা, ষোড়শ শতাব্দীর রেনেসাঁস—উহাদের মূলেও নিশ্চয়ই অন্যান্য শক্তির ক্রিয়া ছিল।

 বাঙলা দেশে ঊনবিংশ শতাব্দীতে যে জাতীয় অভ্যুদয়ের আন্দোলন হইয়াছিল, তাহার মূলেও তেমনি বিভিন্ন শক্তির ক্রিয়া আমরা প্রত্যক্ষ করি। এ আন্দোলনে জাতীয় জীবনের সমস্ত দিকেই সাড়া পড়িয়া গিয়াছিল। সাহিত্য, ধর্ম, সমাজ, রাষ্ট্রনীতি—সকল ক্ষেত্রেই একটা নবজাগরণ আসিয়াছিল। জাতীয় আন্দোলন বা জাতীয় স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা তাহারই একটা অভিব্যক্তি; কংগ্রেস, স্বদেশী আন্দোলন প্রভৃতির ভিতর দিয়া তাহাই রূপ পরিগ্রহ করিয়াছে। ইহাকে কেবল মাত্র “বুর্জোয়া আন্দোলন” বা “পাতি বুর্জোয়া আন্দোলন” বা চাকুরীপ্রার্থীদের বিক্ষোভের ফল বলিয়া উড়াইয়া দিবার চেষ্টা মূঢ় ভাবদাসত্ব ছাড়া আর কিছুই নহে। জাতীয় আন্দোলনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধের মধ্যে যাঁহারা ‘বুর্জোয়া’ বা “পাতি বুর্জোয়া” মনোভাব ব্যতীত আর কিছুই দেখিতে পান না, তাঁহারা নিতান্তই করুণার পাত্র।

 এইরূপ ভাবদাসত্বে যাঁহাদের বুদ্ধি আচ্ছন্ন হইয়াছে, তাঁহারাই জাতীয় ভাব বা স্বাদেশিকতাকে ক্ষুদ্র জিনিষ বলিয়া মনে করেন, স্বদেশপ্রেম বা স্বজাতিপ্রেমও ইঁহাদের নিকট বড় কথা নহে। বিশ্বের “সর্বহারাদের” মুক্তি ভিন্ন অন্য সমস্ত জিনিষকেই ইঁহারা তুচ্ছ মনে করেন। কিন্তু অদৃষ্টের পরিহাস, ইঁহাদের পীঠস্থান মস্কো এবং মহাগুরু ষ্ট্যালিন ইঁহাদিগকে লজ্জা দিয়াছেন। এই মহাযুদ্ধে মহাবীর ষ্ট্যালিন স্বদেশপ্রেম বা জাতীয়তাকেই বড় আদর্শ বলিয়া ধরিয়াছেন, রুশজাতি তাই ফাদারল্যাণ্ড বা পিতৃভূমি রাশিয়ার স্বাধীনতা রক্ষার জন্যই যুদ্ধ করিতেছে, বিশ্বের সমস্ত নিঃস্ব সর্বহারাদের মুক্তির জন্য নহে। তাই আমাদের মনে আশা