পাতা:জাতীয় সাহিত্য - আশুতোষ মুখোপাধ্যায় (১৯৩৬).pdf/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

॥৵০

করিয়াও আশুতোষ দেশের কার্য্যে সম্পূর্ণরূপে আত্মনিয়োগ করিবার অসাধ্যসাধন হইতে বিরত হয়েন নাই। নিজের স্বাস্থ্য ও পারিবারিক কর্তtব্যে উদাসীন থাকিয়া তিনি দেশের সেবায় প্রাণ উৎসর্গ করিয়াছিলেন। তাঁহার প্রাণে বিধাতা যেরূপ জাতীয়তা ও স্বদেশ-প্রেমের অসাধারণ প্রেরণা প্রদান করিয়াছিলেন, তাঁহার বাহুতেও সেইরূপ বিরাট্ কর্ম্মশক্তি দিয়াছিলেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় যে তাঁহার শুধু অফুরন্ত কর্ম্মশক্তি ও অলৌকিক সৃষ্টিপ্রতিভার পরিচয় প্রদান করে তাহা নহে; ইহা তাঁহার জাতীয়তা-বুদ্ধিরও প্রকৃষ্ট নিদর্শন। আশুতোষেরই চেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয়েরা তাহাদের স্বাধিকারে প্রতিষ্ঠিত হইল। ইহা এক্ষণে সম্পূর্ণরূপে স্বদেশী প্রতিষ্ঠান। বাঙ্গালীর বিশ্ববিদ্যালয় সত্যই বাঙ্গালীর সম্পত্তি হইয়াছে; ইহা আশুতোষের সামান্য কৃতিত্ব নহে।

 সার আশুতোষের চরিত্র নৈতিক সম্পদে ভূষিত ছিল। এই নৈতিক চরিত্র-বলের জন্য তিনি দেশের সর্ব্বত্র সম্মান প্রাপ্ত হইতেন। কি সর্ব্বোচ্চ ধর্ম্মাধিকরণের বিচারাসনে, কি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ণধাররূপে, সর্ব্বত্রই তাঁহার নির্ভীকতা ও সাহসের সম্যক্ পরিচয় পাওয়া যাইত। এই স্বাধীনচেতা মহাপুরুষ ভয় কাহাকে বলে জানিতেন না। তাঁহার অপ্রতিহত তেজের নিকট সকলেই শ্রদ্ধা ও বিস্ময়ে মস্তক অবনত করিত। শ্রেষ্ঠ রাজপুরুষগণের সহিত ব্যবহারেও তিনি কখনও সংকীর্ণ স্বার্থের লোভে মস্তক অবনত করেন নাই। বস্তুতঃ এই তেজোদৃপ্ত পুরুষসিংহের চরিত্রের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল তাঁহার নির্ভীকতা। এই জন্য তিনি ‘বাংলার বাঘ’ এই আখ্যা প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। সত্যকে আশ্রয় করিয়া তিনি স্বৈর গতিতে কল্যাণের পথে, প্রগতির