পাতা:জাতীয় সাহিত্য - আশুতোষ মুখোপাধ্যায় (১৯৩৬).pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আশুতোষ ইহার একটি অধিবেশনে সভাপতি হইয়াছিলেন। এই সকল অধিবেশনে সভাপতির অভিভাষণরূপে তিনি যাহা বলিয়াছিলেন, তাহা বঙ্গসাহিত্যের ইতিহাসে রক্ষিত হইবার যোগ্য। এই সকল সভায় ও অন্যত্র তাঁহার ওজস্বিনী বাণী বাঙ্গালীর সাহিত্য-জীবনে এক নূতন উদ্দীপনা ও প্রেরণা আনয়ন করিয়াছিল।

 কৃত্তিবাস ও মাইকেল মধুসূদন বাঙ্গালীর জাতীয় কবি। ফুলিয়ায় কৃত্তিবাসের স্মৃতিমন্দিরের ভিত্তিস্থাপন-উপলক্ষে ও মাইকেলের মৃত্যুদিনের স্মৃতিবাসরে তাঁহার সমাধি-প্রাঙ্গণে সভাপতিরূপে সার আশুতোষ যে প্রাণময়ী বক্তৃতা করিয়াছিলেন, তাহাতেও বঙ্গদেশ ও বঙ্গভাষার প্রতি তাঁহার কি প্রগাঢ় শ্রদ্ধা ছিল, তাহা বুঝিতে পারা যায়। কর্ম্মবহুল জীবনের বিবিধ ও বিচিত্র কার্য্যকলাপের মধ্যে আশুতোষ বাঙ্গালা সাহিত্যের প্রতি অকৃত্রিম অনুরাগ অক্ষুণ্ণ রাখিয়াছিলেন। নবযুগের কবিতা—মধুসুদন, হেমচন্দ্র, নবীনচন্দ্র ও বিহারীলালের অমৃতময়ী লেখনী হইতে নিঃসৃত ভাবময়ী কবিতা—তাঁহার অতিশয় আদরের বস্তু ছিল, তাই কোনও বিষয়ে কিছু বলিতে গেলেই ঐ সকল কবির বাণী তাঁহার মুখে আপনি আসিয়া জুটিত, তাঁহার কল্পনাকে আরও স্পষ্ট, ভাষাকে আরও আবেগময়ী, প্রকাশভঙ্গীকে আরও সরস ও দৃপ্ত করিয়া তুলিত। বাঙ্গালা সাহিত্যের কোন্ কোন্ সাধকের প্রভাব তাঁহার উপর পড়িয়াছিল তাহা এই ভাবে নির্ণয় করা বিশেষ কঠিন নহে।

 এই যে বক্তৃতাগুলি নিবদ্ধ হইয়া ‘জাতীয় সাহিত্য’ নামে প্রকাশিত হইল, ইহার প্রত্যেক পঙ্ক্তিতে তাঁহার অতুলনীয় স্বদেশপ্রীতির পরিচয় পাওয়া যায়। বাঙ্গালা দেশ ও বাঙ্গালা সাহিত্যকে তিনি প্রাণ দিয়া ভালবাসিয়াছিলেন। এক দিকে