পাতা:জাতীয় সাহিত্য - আশুতোষ মুখোপাধ্যায় (১৯৩৬).pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

১৴০

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্বেতদ্বীপের সরস্বতীর পার্শ্বে বাঙ্গালার শ্বেত শতদলবাসিনী বীণাপাণির আসন প্রতিষ্ঠিত করিয়া অভীষ্ট বর লাভ করিয়াছিলেন, অপর দিকে সাহিত্য-সম্মিলন ও অন্যান্য সভার দ্বার দিয়া বাঙ্গালী জাতিকে প্রবুদ্ধ করিতে চেষ্টা করিয়া তাঁহার দেশবাসীর হৃদয়ে আপন অটল আসন স্থাপিত করিয়াছিলেন।

 বাঙ্গালী জাতির—বিশেষতঃ বাঙ্গালী ছাত্রের—প্রতি তাঁহার অপরিমেয় বিশ্বাস ছিল। এই বক্তৃতাগুলিতে ভবিষ্যতের যে উজ্জ্বল সম্মোহন চিত্র তিনি কল্পনার নেত্রে দেখিয়াছিলেন, তাহাতে তিনি নিজেও মুগ্ধ হইয়াছিলেন এবং তাঁহার শ্রোতৃবৃন্দকেও মুগ্ধ করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন। তাঁহার অপ্রমেয় বিশ্বাসপূর্ণ, শ্রদ্ধাপূর্ণ ও ভবিষ্যতের আশায় বলিষ্ঠ হৃদয়ের আবেগভরা উচ্ছ্বাসে এই নিবন্ধগুলি এমনই একটি পবিত্র মাধুর্য্য ও গাম্ভীর্য্যে মণ্ডিত হইয়াছে, যাহার তুলনা বঙ্গসাহিত্যে বিরল। তাঁহার অতুলনীয় কর্ম্মশক্তি তাঁহার উচ্ছ্বাসময়ী বাণীকে এক অভিনব সার্থকতার অরুণরাগে উজ্জ্বল করিয়াছে। অন্য কোনও স্বপ্নশক্তিসম্পন্ন লোকের মুখে এই বিপুল আশার বাণী মানাইত কি না সন্দেহ।

 ভাষা ও সাহিত্যের মধ্য দিয়া ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের মধ্যে যে একটি ঘনিষ্ঠ ভাব-গত ঐক্য প্রতিষ্ঠিত করা যায়, ইহা তিনি বিশ্বাস করিতেন। তাঁহার অদম্য কর্ম্মশক্তি ও অক্লান্ত সাধনার দ্বারা ভারতবর্ষে এইরূপ এক জাতীয়তার ভিত্তি সুদৃঢ়ভাবে প্রোথিত করিবেন, ইহাই ছিল তাঁহার ঐকান্তিক চেষ্টা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্য দিয়া ভারতের জাতীয় সাহিত্যগুলিকে উন্নত করা, দেশীয় সাহিত্যের মধ্য দিয়া বিভিন্ন প্রদেশের মধ্যে ভাবের আদানপ্রদানের সুযোগ প্রদান করা, ইহাই ছিল