পাতা:জাতীয় সাহিত্য - আশুতোষ মুখোপাধ্যায় (১৯৩৬).pdf/৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৪
জাতীয় সাহিত্য

 মধুসূদন চাহিতেন যে, তাঁহার স্বজাতিকে, তাঁহার চিরপ্রিয় গৌড়জনকে এমন সুধা পান করাইবেন, যাহাতে তাহারা মানুষের মত হইবে। একেই ত নানা ভাবে সকলে ক্রমে নিদ্রাবেশে আচ্ছন্ন হইয়া আসিতেছে, ইহার উপর আবার ঘুমের ঔষধ প্রয়োগ কেন? এখন জাগ্রত করিতে হইবে। তাই মধুর সমস্ত কবিতাতেই একটা প্রাণের অস্তিত্ব দেখিতে পাই। দেখিতে পাই, তাঁহার কবিতার সমস্তই প্রায় দেশীয় উপাদানে রচিত, তাহাতে বিদেশীয় মলা নাই। তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষা পাইয়াছিলেন, পাশ্চাত্ত্য জগতের ভালমন্দ সমস্তই দেখিয়াছিলেন ও শিখিয়াছিলেন, কিন্তু তাঁহার পিতৃ-পিতামহের প্রাচ্যের প্রতিমার স্থানে কদাচ পাশ্চাত্ত্য প্রতিমা বসান নাই, জাতীয়তা বিসর্জ্জন দেন নাই। (পশ্চিম গগনের সুচারু সান্ধ্য রাগের আভায় তিনি তদীয় কবিতারাণীর ললাট মার্জ্জনা করিয়া দিয়াছেন মাত্র, কিন্তু তাঁহার প্রাণ-প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন প্রাচীর অরুণ-রাগে।) তাই তাঁহার কবিতার বিনাশ অসম্ভব। উপবৃক্ষই কালে শুকাইয়া যায়—মূল বৃক্ষের কিছুই হয় না। সোজা কথায়, ইউরোপের নানা কারুকার্যখচিত সুন্দর ফ্রেমে তিনি ভারতীয় ছবি বাঁধাইয়াছেন। জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্পকলা দেশাত্তর হইতে গ্রহণ করা কর্ত্তব্য; কিন্তু জাতীয় কবিতাও যদি বিজাতীয় ছাঁচে ঢালাই করিতে হয়, তবে