পাতা:জাতীয় সাহিত্য - আশুতোষ মুখোপাধ্যায় (১৯৩৬).pdf/৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত
৬৫

আর রহিল কি? এরূপ দুষ্কার্য্যের ফল জাতীয়তার ক্রমিক ধ্বংস।

  মহাকবি মধুসূদন সে পথে যান নাই। তিনি ইউরোপের অমিত্রাক্ষরে এ দেশের কবিতাকে সাজাইয়াছেন। তিনি গৌড়কে প্রাণময় করিতে চাহিয়াছিলেন, বঙ্গের কবিতাকে মদালসার পরিবর্ত্তে বীরাঙ্গনার ভূষায় ভূষিত করিতে মনস্থ করিয়াছিলেন,—কৃতকার্য্যও হইয়াছেন। নাটকপ্রহসনাদি সম্বন্ধে তাঁহার সাফল্য তর্কের বিষয় হইলেও অমিত্রচ্ছন্দের সম্পর্কে তিনি যে নব যুগের প্রবর্ত্তন করিয়া গিয়াছেন, তাহা সর্ব্ববাদিসম্মত। মধুসূদনের পূর্বে বঙ্গভাষায় অমিত্রচ্ছন্দ অন্যভাবে কদাচিৎ পরিদৃষ্ট হইত বটে, কিন্তু তাহার কোনরূপ আকর্ষণী শক্তি ছিল না। মধুসূদনের যে কম্বুনাদে, বঙ্গসাহিত্য-গগন মুখরিত, তাহার এক ভগ্নাংশও ঐ সব প্রাণহীন কবিতায় খুঁজিয়া পাওয়া যাইত না। শুধু তাঁহার নয়নের নহে, তাঁহার কবিতার “হিরণ্ময় জ্যোতিতে”ও[] বাঙ্গালা ভাষা চিরদিনের মত জ্যোতিষ্মতী হইয়া রহিয়াছে। তাঁহার কার্য্যে এবং কবিতায়, উভয়ত্রই একটা উৎকট আবেগ দেখিতে পাই। কার্যক্ষেত্রে যেমন তিনি কদাচ জড়তার অধীন হইতেন না, কখনও এক ভাবে একটা বিষয় লইয়া থাকিতে পারিতেন না,—সর্ব্বদাই চাহিতেন, যাহা করিতেছেন তাহা ছাড়া আরও একটা কিছু,— কবিতার ক্ষেত্রেও তদ্রূপ। যখন যেখানে গিয়াছেন, ভালমন্দ