পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮
জাপান-যাত্রী

লাগল। তার পিছনে পিছনে বজ্রের গর্জ্জন। একটা বজ্র ঠিক আমাদের সাম্‌নে জলের উপর পড়ল, জল থেকে একটা বাষ্পরেখা সাপের মত ফোঁস করে উঠ্‌ল। আর একটা বজ্র পড়ল আমাদের সাম্‌নেকার মাস্তুলে। রুদ্র যেন সুইট্‌জারল্যাণ্ডের ইতিহাস-বিশ্রুত বীর উইলিয়ম টেলের মত তাঁর অদ্ভুত ধনুর্বিদ্যার পরিচয় দিয়ে গেলেন, মাস্তুলের ডগাটায় তাঁর বাণ লাগল, আমাদের স্পর্শ করল না। এই ঝড়ে আমাদের সঙ্গী আর একটা জাহাজের প্রধান মাস্তুল বিদীর্ণ হয়েচে শুনলুম। মানুষ যে বাঁচে এই আশ্চর্য্য।


 এই কয়দিন আকাশ এবং সমুদ্রের দিকে চোখ ভরে দেখ্‌চি, আর মনে হচ্ছে অন্তরের রং ত শুভ্র নয়, তা কালো কিম্বা নীল। এই আকাশ খানিক দূর পর্য্যন্ত আকাশ অর্থাৎ প্রকাশ—ততটা সে সাদা। তারপরে সে অব্যক্ত, সেইখান থেকে সে নীল। আলো যতদূর, সীমার রাজ্য সেই পর্য্যন্ত; তারপরেই অসীম অন্ধকার। সেই অসীম অন্ধকারের বুকের উপরে এই পৃথিবীর আলোকময় দিনটুকু যেন কৌস্তুভমণির হার দুল্‌চে।

 এই প্রকাশের জগৎ, এই গৌরাঙ্গী, তার বিচিত্র বঙের সাজ পরে’ অভিসারে চলেচে—ঐ কালোর দিকে, ঐ অনির্ব্বচনীয় অব্যক্তর দিকে। বাঁধা নিয়মের মধ্যে বাঁধা থাকাতেই তার মরণ—সে কুলকেই সর্ব্বস্ব করে চুপ করে বসে থাক্‌তে পারে