পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাপান-যাত্রী
৪৯

নয়―মা বাপ হবে, বাঙালী কর্ম্মচারী চিরকালের অভ্যাস বশত এইটে প্রত্যাশা করে; যখন বাধা পায় তখন আশ্চর্য্য হয়, এবং মনে মনে মনিবকে দোষ না দিয়ে থাকতে পারে না। ইংরেজ কাজের দাবীকে মানতে অভ্যস্ত, বাঙালী মানুষের দাবীকে মান্‌তে অভ্যস্ত,―এই জন্যে উভয়পক্ষে ঠিকমত মিট্‌মাট্‌ হতে চায় না।

 কিন্তু কাজের সম্বন্ধ এবং মানুষের সম্বন্ধ, এ দুইয়ের বিচ্ছেদ না হয়ে সামঞ্জস্য হওয়াটাই দরকার, এ কথা না মনে করে থাকা যায় না। কেমন করে সামঞ্জস্য হতে পারে, বাইরে থেকে তার কোনো বাঁধা নিয়ম ঠিক করে দেওয়া যায় না। সত্যকার সামঞ্জস্য প্রকৃতির ভিতর থেকে ঘটে। আমাদের দেশে প্রকৃতির এই ভিতরকার সামঞ্জস্য ঘটে ওঠা কঠিন কেননা যাঁরা আমাদের কাজের কর্ত্তা, তাদের নিয়ম অনুসারেই আমরা কাজ চালাতে বাধ্য।

 জাপানে প্রাচ্যমন পাশ্চাত্যের কাছ থেকে কাজের শিক্ষালাভ করেছে, কিন্তু কাজের কর্ত্তা তারা নিজেই। এই জন্যে মনের ভিতরে একটা আশা হয় যে, জাপানে হয় ত পাশ্চাত্য কাজের সঙ্গে প্রাচ্যভাবের একটা সামঞ্জস্য ঘটে উঠ্‌তে পারে। যদি সেটা ঘটে, তবে সেইটেই পূর্ণতার আদর্শ হবে। শিক্ষার প্রথম অবস্থায় অনুকরণের ঝাঁজটা যখন কড়া থাকে, তখন বিধিবিধান সম্বন্ধে ছাত্র গুরুর চেয়ে আরো কড়া হয়; কিন্তু ভিতরকার প্রকৃতি আস্তে আস্তে আপনার কাজ কর্‌তে থাকে, এবং শিক্ষার