পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাপান-যাত্রী
৭৭

ঐখানে পৌঁছলে পরে সমুদ্রের চঞ্চলনীল, আকাশের শান্তনীল আর ঐ পাহাড়গুলোর ঝাপ সানীল ছাড়া আর কিছুর দরকারই হয় না। তার পরে বিরল ক্রমে অবিরল হতে লাগল, ক্ষণে ক্ষণে আমাদের জাহাজ এক একটা দ্বীপের গা ঘেঁষে চল্‌ল; তখন দেখি দূরবীন টেবিলের উপরে অনাদরে পড়ে থাকে, মন আর সাড়া দেয় না। যখন দেখবার সামগ্রী বেড়ে ওঠে, তখন দেখাটাই কমে যায়। নতুনকে ভোগ করে নতুনের ক্ষিদে ক্রমে কমে যায়।

 হপ্তাখানেক জাপানে আছি, কিন্তু মনে হচ্ছে যেন অনেক দিন আছি। তার মানে, পথঘাট, গাছপালা, লোকজনের যেটুকু নতুন, সেটুকু তেমন গভীর নয়,― তাদের মধ্যে যেটা পুরোনো সেইটেই পরিমাণে বেশী। অফুরান নতুন কোথাও নেই; অর্থাৎ যার সঙ্গে আমাদের চিরপরিচিত খাপ খায় না, জগতে এমন অসঙ্গত কিছুই নেই। প্রথমে ধাঁ করে চোখে পড়ে যেগুলো হঠাৎ আমাদের মনের অভ্যাসের সঙ্গে মেলে না।― তারপরে পুরোণোর সঙ্গে নতুনের যে যে অংশের রঙে মেলে, চেহারায় কাছাকাছি আসে, মন তাড়াতাড়ি সেইগুলোকে পাশাপাশি সাজিয়ে নিয়ে তাদের সঙ্গে ব্যবহারে প্রবৃত্ত হয়। তাস খেল্‌তে বসে আমরা হাতে কাগজ পেলে রং এবং মূল্য-অনুসারে তাদের পরে পরে সাজিয়ে নিই,―এও সেই রকম। শুধু ত নতুনকে দেখে যাওয়া নয়, তার সঙ্গে যে ব্যবহার করতে হবে; কাজেই মন তাকে নিজের পুরোণো কাঠামোর মধ্যে যত শীঘ্র পারে গুছিয়ে নেয়। যেই গোছানো হয়, তখন দেখতে