পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাপান-যাত্রা
৮১

সকলের চেয়ে বড় করে খাতির করেনি, সেই জন্যেই ওরা নয়নমনের আনন্দ।

 একটা জিনিস এখানে পথে ঘাটে চোখে পড়ে। রাস্তায় লোকের ভিড় আছে, কিন্তু গোলমাল একেবারে নেই। এরা যেন চেঁচাতে জানে না, লোকে বলে জাপানের ছেলেরা সুদ্ধ কাঁদে না। আমি এপর্য্যন্ত একটি ছেলেকেও কাঁদতে দেখিনি। পথে মোটরে করে যাবার সময়ে, মাঝে মাঝে যেখানে ঠেলাগাড়ি প্রভৃতি বাধা এসে পড়ে, সেখানে মোটরের চালক শান্তভাবে অপেক্ষা করে,―গাল দেয় না, হাঁকাহাঁকি করে না। পথের মধ্যে হঠাৎ একটা বাইসিক্‌ল্‌ মোটরের উপরে এসে পড়বার উপক্রম কর্‌লে—আমাদের দেশের চালক এ অবস্থায় বাইসিক্‌ল্‌ আরোহীকে অনাবশ্যক গাল না দিয়ে থাক্‌তে পারত না। এ লোকটা ভ্রূক্ষেপ মাত্র কর্‌লে না। এখানকার বাঙালীদের কাছে শুনতে পেলুম যে, রাস্তায় দুই বাইসিক্লে, কিম্বা গাড়ির সঙ্গে বাইসিক্লের ঠোকাঠুকি হয়ে যখন রক্তপাত হয়ে যায়, তখনো উভয় পক্ষ চেঁচামেচি গালমন্দ না করে, গায়ের ধুলো ঝেড়ে চলে যায়।

 আমার কাছে মনে হয়, এইটেই জাপানের শক্তির মূল কারণ। জাপানী বাজে চেঁচামেচি ঝগড়াঝাঁটি করে নিজের বলক্ষয় করে না। প্রাণশক্তির বাজে খরচ নেই বলে প্রয়োজনের সময় টানাটানি পড়ে না। শরীর মনের এই শান্তি ও সহিষ্ণুতা, ওদের স্বজাতীয় সাধনার একটা অঙ্গ। শোকে