ভারতী বৈশাখ, ১৩০৪ ( শ্ৰীমতী স্বর্ণকুমারী দেবী লিখিত ) বঙ্কিম বাবু তাহার কোন এক লেখায়—যতদূর মনে পড়িতেছে কবি রামপ্রসাদ সেনের জীবনীর ভূমিকায়—বলিয়াছেন, একদিন তাহারা গঙ্গাতীরে বসিয়াছিলেন, একজন মাঝি ফুলের উপর দিয়া গাহিয়া যাইতেছিল— সাধ আছে মা মনে দুর্গ বলে প্রাণ ত্যজিব জাহ্নবী জীবনে । মাতৃভাষার এই সরল সহজ গানটি শুনিয় তাহার হৃদয় যেরূপ ভক্তিরসে উথলিয়া উঠিয়াছিল—এমন ইংরাজি কিম্বা আধুনিক বাঙ্গালার উচ্চতর মহত্তর ভাবযুক্ত কবিতাতে হয় নাই । প্রকৃতি সম্বন্ধে আমাদের মনের ভাব ঠিক এইরূপ —প্রকৃতিতে যে সকল প্রাকৃতিকজ্ঞানের কথা আছে তাহা কিছু নুতন কথা নহে ; পাশ্চাত্যজ্ঞানের সারসঙ্কলনমাত্র । এ সকল তত্ত্বের সহিত অল্পবিস্তর পরিমাণে ইতিপূৰ্ব্বেই যে আমাদের আলাপ পরিচয় না হইয়াছে এমন বলিতে পারি না । অথচ সেই সব কথাই এই বইখানিতে পড়িতে যতখানি আনন্দ যতদূর তৃপ্তিলাভ করিলাম, এমন পূৰ্ব্বে করিয়াছি বলিয়। মনে হয় না । কারণ আর কিছু নহে—কেবল ভাষার গুণে। বিদেশীয় ভাষায় এ সকল জ্ঞান আয়ত্ত করিতে যে শ্রম যে ক্লেশ স্বীকার করিতে হইয়াছিল, ইহাতে সে ক্লেশ নাই সে শ্রম নাই ; আছে শুধু জ্ঞানলাভের আনন্দ—আর কাব্যপাঠের মুগ্ধতা । বস্তুতঃই প্রকৃতি পড়িতে এতই ভাল লাগে যে ভুলিয়া যাইতে হয় ইহা বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ—মনে হয় যেন কাব্যপাঠ করিতেছি । লেখক ভূমিকায় হতাশভাবে বলিয়াছেন “বাঙ্গালাভাষায় সাধারণ পাঠকের নিকট বিজ্ঞান প্রচার বোধ হয় অসাধ্য সাধনের চেষ্টা ;.সিদ্ধিলাভের ভরসা করি না । কিন্তু আমরা অসঙ্কোচে বলিতেছি—ইহা যদি অসাধ্য সাধন হয় ত তিনি অসাধ্য সাধন করিয়াছেন । জগৎ-অভিব্যক্তি, প্রাকৃতিক নিৰ্ব্বাচন, আলোক, তাড়িত
পাতা:জিজ্ঞাসা.djvu/৩৪০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।