[ e ] কাল কয়েক ব্যক্তির প্রবন্ধাদি পাঠ করিয়া বঙ্গভাষায় ও বঙ্গ সাহিত্যের মৌলিকতা ও পরিপুষ্টি বিষয়ে সমধিক আশান্বিত হইতেছি । তন্মধ্যে পুনরায় উল্লেখ করিতেছি যে, বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে রামেন্দ্র বাবুর স্থায় সিদ্ধহস্ত আমরা অতি অল্পই দেখিয়াছি । আমাদের কোন বিলাতপ্রত্যাগত স্ববিদ্বান বন্ধু আমার সহিত এই বিষয়ের আলাপে বলিয়ছিলেন যে, রামেন্দ্র বাবুর অনেকগুলি প্রবন্ধ নাইণ্টীস্থ সেঞ্চুরীর ন্তায় সাময়িক পত্রে হকৃমূলি প্রভৃতির লিখিত প্রবন্ধগুলির সহিত সমান আসন প্রাপ্ত হইতে পারে। দাসী আগষ্ট ১৮৯৭ (সম্পাদক লিখিত ) প্রকৃতি—এই গ্ৰন্থখানিতে বিজ্ঞানের বিবিধ তত্ত্ব সরল ভাষা ও ভাবের সমাবেশে অতি মুখপাঠ্য হইয়াছে, অথচ সাহিত্য-সৌন্দর্য্য ৰিকাশ করিতে যাইয়া, মুলতত্ত্বের বিবৃতিকে কোথায়ও অঙ্গহীন করা হয় নাই। বলিতে কি—রামেন্দ্র বাবুর “প্রকৃতি"র সৌন্দর্য্যে মোহিত হইয়া, আমরা বলিতে বাধ্য হইলাম—এ স্বধু প্রকৃতি নয়, প্রকৃতির রম্য কানন । বঙ্কিমচন্দ্র বা রবীন্দ্রনাথের উৎকৃষ্ট উপল্প।স হইতে এখানি কোন অংশে হীনতর নয় । র্যাহার উপদ্যাস পাঠে অতিশয় আগ্রহাম্বিত, তাহাদিগকে অমুরোধ করি—একবার তাহার এই “প্রকৃতির” উপন্যাসখানি পড়িয়া দেখুন । তাহাদের মনে হইবে—যেন তাহার কোন জ্ঞানপ্রবীণ ঋষিমুক্তির নির্দেশ অনুসারে হঠাৎ সংসার কোলাহল হইতে মুক্ত হইয়া, মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় প্রকৃতির নিভৃত কক্ষ হইতে নিভৃততর, নিভূততম নীরব গম্ভীর কক্ষে কক্ষে ভয়চকিত-নেত্রে প্রবেশ লাভ করিতেছেন, আর প্রকৃতির নিয়ম প্রবাহের গম্ভীর নাদে সৌন্দর্য্যে অলঙ্ঘ্য শক্তিমত্তায় ও মহিমায় প্লাবিত হইতেছেন । মানব জাতির নিকট এত দিন প্রকৃতি আত্মগোপন করিয়৷ বাস করিতেছিলেন, কিন্তু অবশেষে তাহাকে ধরা দিয়া আত্মপরিচয় প্রদান করিতে হইতেছে ।
পাতা:জিজ্ঞাসা.djvu/৩৪৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।