পাতা:জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থ (প্রথম খণ্ড).pdf/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাহ্নের চাষা ভুল বুঝে হেঁটে যায়, উচ্ছলিত রোদে।
নেই, তবু প্রতিভাত হ’য়ে ওঠে নারী।
মর্গের মৃতদেহ দোয়েলের শিশে মিটে গেলে
আদিম দোয়েল এলে-—অনুভব ক’রে নিতে পারি ।

সমুদ্র পায়রা

কেমন ছড়ানো লম্বা ডানাগুলো সারাদিন সমুদ্র-পাখির।
যত দূর চোখ যায় সাগরের গাঢ় নীলিমায়
নিজেকে উজোতে গিয়ে চোখের নিমেষে
সকালবেলার রোদ পাখি হ’য়ে যায় ।
কোথায় আফ্রিকা আলুলায়িত শ্বেতাঙ্গ-নীল চোখে—
এ-পৃথিবী কবলিত হয়,—
কোথায় চড়ুই দেখে বেড়ালের নিজন চোখের
নীলিমা কি জীবন–কি মৃত্যুর বিস্ময়,—
অনুভব ক’রে প্রিয় মনে হয় জীবনই গভীর,—
মদির মৃত্যুর সাথে ঐতিহাসিক কাল খেলে;
সৈকতে বাজারে মত পমফ্রেটের অমাযামিনীর
নক্ষত্রে সূর্যের মতো পাখি তুমি এলে

আবহমান

পৃথিবী এখন ক্ৰমে হতেছে নিঝুম।
সকলেরই চোখ ক্ৰমে বিজড়িত হ’য়ে যেন আসে;
যদিও আকাশ সিন্ধু ভ'রে গেলো অগ্নির উল্লাসে;
যেমন যখন বিকালবেলা কাটা হয় খেতের গোধুম
চিলের কান্নার মতো শব্দ ক’রে মেঠো ইঁদুরের ভিড় ফসলের ঘুম

গাঢ় ক’রে দিয়ে যায়! —এইবার কুয়াশায় যাত্রা সকলের।
সমুদ্রের রোল থেকে একটি আবেগ নিয়ে কেউ
নদীর তরঙ্গে—ক্ৰমে—তুষারের স্তুপে তার ঢেউ
একবার টের পাবে — দ্বিতীয় বারের
সময় আসার আগে নিজেকেই পাবে না সে টের।

এইখানে সময়কে যতদুর দেখা যায় চোখে
নির্জন খেতের দিকে চেয়ে দেখি দাঁড়ায়েছে অভিভূত চাষা;
এখনো চালাতে আছে পৃথিবীর প্রথম তামাশা
সকল সময় পান ক’রে ফেলে জলের মতন এক ঢোঁকে ;
অঘ্রানের বিকেলের কমলা আলোকে

১৩৪