পাতা:জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা.djvu/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।


আমাকে দ্যাখোনি তুমি; দেখাবার মতো
অপব্যয়ী কল্পনার ইন্দ্রত্বের আসনে আমাকে
বসালে চকিত হ’য়ে দেখে যেতে যদি— তবু, সে-আসনে আমি
যুগে-যুগে সাময়িক শত্রুদের বসিয়েছি, নারি,
ভালোবেসে ধ্বংস হ’য়ে গেছে তা’রা সব।
এ-রকম অন্তহীন পটভূমিকায়— প্রেমে—
নতুন ঈশ্বরদের বার-বার লুপ্ত হ’তে দেখে
আমারো হৃদয় থেকে তরুণতা হারায়ে গিয়েছে;
অথচ নবীন তুমি।

নারি, তুমি সকালের জল উজ্জ্বলতা ছাড়া পৃথিবীর কোনো নদীকেই
বিকেলে অপর ঢেউয়ে খরশান হ’তে
দিতে ভুলে গিয়েছিলে; রাতের প্রখর জলে নিয়তির দিকে
ব’হে যেতে দিতে মনে ছিলো কি তোমার?
এখনও কি মনে নেই?

আজ এই পৃথিবীর অন্ধকারে মানুষের হৃদয়ে বিশ্বাস
কেবলি শিথিল হ’য়ে যায়; তবু তুমি
সেই শিথিলতা নও, জানি, তবু ইতিহাসরীতিপ্রতিভার
মুখোমুখি আবছায়া দেয়ালের মতো নীল আকাশের দিকে
ঊর্ধ্বে উঠে যেতে চেয়ে তুমি
আমাদের দেশে কোনো বিশ্বাসের দীর্ঘ তরু নও।

তবু
কী যে উদয়ের সাগরের প্রতিবিম্ব জ্ব’লে ওঠে রোদে!
উদয় সমাপ্ত হ’য়ে গেছে নাকি সে অনেক আগে?
কোথাও বাতাস নেই, তবু
মৰ্মরিত হ’য়ে ওঠে উদয়ের সমুদ্রের পারে।

১১৩