পাতা:জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা.djvu/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কেমন আশ্চর্য গান গায়;
বোবা কালা পাগল মিনসে এক অপরূপ বেহালা বাজায়;
গানের ঝঙ্কারে যেন সে এক একান্ত শ্যাম দেবদারু গাছে
রাত্রির বর্ণের মতো কালো-কালো শিকারী বেড়াল
প্রেম নিবেদন করে আলোর রঙের মতো অগণন পাখিদের কাছে;
ঝর্ ঝর্ ঝর্
সারারাত শ্রাবণের নিৰ্গলিত ক্লেদরক্ত বৃষ্টির ভিতর
এ-পৃথিবী ঘুম স্বপ্ন রুদ্ধশ্বাস
শঠতা রিরংসা মৃত্যু নিয়ে
কেমন প্রমত্ত কালো গণিকার উল্লোল সংগীতে
মুখের ব্যাদান সাধ দুৰ্দান্ত গণিকালয়— নরক শ্মশান হ’লো সব।
জেগে উঠে আমাদের আজকের পৃথিবীকে এ-রকম ভাবে অনুভব
আমিও করেছি রোজ সকালের আলোর ভিতরে
বিকেলে— রাত্রির পথে হেঁটে;
দেখেছি রজনীগন্ধা নারীর শরীর অন্ন মুখে দিতে গিয়ে
আমরা অঙ্গার রক্ত: শতাব্দীর অন্তহীন আগুনের ভিতরে দাঁড়িয়ে।

এ-আগুন এত রক্ত মধ্যযুগ দেখেছে কখনো?
তবুও সকল কাল শতাব্দীকে হিসেব নিকেশ ক’রে আজ
শুভ কাজ সূচনার আগে এই পৃথিবীর মানবহৃদয়
স্নিগ্ধ হয়— বীতশোক হয়?
মানুষের সব গুণ শান্ত নীলিমার মতো ভালো?
দীনতা: অন্তিম গুণ, অন্তহীন নক্ষত্রের আলো।

১১৮