পাতা:জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা.djvu/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

১৯৪৬-৪৭

দিনের আলোয় ওই চারিদিকে মানুষের অস্পষ্ট ব্যস্ততা:
পথে-ঘাটে ট্রাক ট্রামলাইনে ফুটপাতে;
কোথাও পরের বাড়ি এখুনি নিলেম হবে— মনে হয়,
জলের মতন দামে।
সকলকে ফাঁকি দিয়ে স্বর্গে পৌঁছুবে
সকলের আগে সকলেই তাই।

অনেকেরই ঊর্ধ্বশ্বাসে যেতে হয়, তবু
নিলেমের ঘরবাড়ি আসবাব— অথবা যা নিলেমের নয়
সে-সব জিনিস
বহুকে বঞ্চিত ক’রে দু-জন কি একজন কিনে নিতে পারে।
পৃথিবীতে সুদ খাটে: সকলের জন্যে নয়।
অনির্বচনীয় হুণ্ডি একজন দু-জনের হাতে।
পৃথিবীর এই সব উঁচু লোকদের দাবি এসে
সবই নেয়, নারীকেও নিয়ে যায়।
বাকি সব মানুষেরা অন্ধকারে হেমন্তের অবিরল পাতার মতন
কোথাও নদীর পানে উড়ে যেতে চায়,
অথবা মাটির দিকে— পৃথিবীর কোনো পুনঃপ্রবাহের বীজের ভিতরে
মিশে গিয়ে। পৃথিবীতে ঢের জন্ম নষ্ট হ’য়ে গেছে জেনে, তবু
আবার সূর্যের গন্ধে ফিরে এসে ধুলো ঘাস কুসুমের অমৃতত্বে কবে
পরিচিত জল, আলো আধো অধিকারিণীকে অধিকার ক’রে নিতে হবে
ভেবে তা’রা অন্ধকারে লীন হ’য়ে যায়।

লীন হ’য়ে গেলে তা’রা তখন তো— মৃত।
মৃতেরা এ-পৃথিবীতে ফেরে না কখনো।
মৃতেরা কোথাও নেই; আছে?
কোনো-কোনো অঘ্রাণের পথে পায়চারি-করা শান্ত মানুষের
হৃদয়ের পথে ছাড়া মৃতের কোথাও নেই বলে মনে হয়;

১২১