পাতা:জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা.djvu/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

(আমাদের পূর্বপুরুষেরা কোন্ বাতাসের শব্দ শুনেছিলো;
তারপর হয়েছিলো পাথরের মতন নীরব?)
আমাদের মণিবন্ধে সময়ের ঘড়ি
কাচের গেলাসে জলে উজ্জ্বল শফরী;
সমুদ্রের দিবারৌদ্রে আরক্তিম হাঙরের মতো;
তারপর অন্য গ্রহ নক্ষত্রেরা আমাদের ঘড়ির ভিতরে
যা হয়েছে, যা হতেছে, অথবা যা হবে সব এক সাথে প্রচারিত করে।
সৃষ্টির নাড়ীর ’পরে হাত রেখে টের পাওয়া যায়
অসম্ভব বেদনার সাথে মিশে র’য়ে গেছে অমোঘ আমোদ;
তবু তা’রা করেনাকো পরস্পরের ঋণশোধ।


ভিখিরী

একটি পয়সা আমি পেয়ে গেছি আহিরীটোলায়,
একটি পয়সা আমি পেয়ে গেছি বাদুড়বাগানে,
একটি পয়সা যদি পাওয়া যায় আরো—
তবে আমি হেঁটে চ’লে যাবো মানে-মানে।
—ব’লে সে বাড়ায়ে দিলো অন্ধকারে হাত।
আগাগোড়া শরীরটা নিয়ে এক কানা যেন বুনে যেতে চেয়েছিলো তাঁত;
তবুও তা নুলো শাঁখারীর হাতে হয়েছে করাত।

একটি পয়সা আমি পেয়ে গেছি মাঠকোটা ঘুরে,
একটি পয়সা আমি পেয়ে গেছি পাথুরিয়াঘাটা,
একটি পয়সা যদি পাওয়া যায় আরো—
তা হ’লে ঢেঁকির চাল হবে কলে ছাঁটা।
—ব’লে সে বাড়ায়ে দিলো গ্যাসলাইটে মুখ।
ভিড়ের ভিতরে তবু— হ্যারিসন রোডে— আরো গভীর অসুখ,
এক পৃথিবীর ভুল; ভিখিরীর ভুলে: এক পৃথিবীর ভুলচুক।

৬০