পাতা:জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা.djvu/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হাজার বছর শুধু খেলা করে

হাজার বছর শুধু খেলা করে অন্ধকারে জোনাকির মতো:
চারিদিকে পিরামিড— কাফনের ঘ্রাণ;
বালির উপরে জ্যোৎস্না— খেজুর-ছায়ারা ইতস্তত
বিচূর্ণ থামের মতো: এশিরিয়— দাঁড়ায়ে রয়েছে মৃত, ম্লান।
শরীরে মমির ঘ্রাণ আমাদের— ঘুচে গেছে জীবনের সব লেনদেন;
‘মনে আছে?’ সুধালো সে— সুধালাম আমি শুধু, ‘বনলতা সেন।’


শব

যেখানে রুপালি জ্যোৎস্না ভিজিতেছে শরের ভিতর,
যেখানে অনেক মশা বানায়েছে তাহাদের ঘর;
যেখানে সোনালি মাছ খুঁটে-খুঁটে খায়
সেই সব নীল মশা মৌন আকাঙ্ক্ষায়;
নির্জন মাছের রঙে যেইখানে হ’য়ে আছে চুপ
পৃথিবীর একপাশে একাকী নদীর গাঢ় রূপ;
কান্তারের একপাশে যে-নদীর জল
বাবলা হোগলা কাশে শুয়ে-শুয়ে দেখিছে কেবল
বিকেলের লাল মেঘ; নক্ষত্রের রাতের আঁধারে
বিরাট নীলাভ খোঁপা নিয়ে যেন নারী মাথা নাড়ে
পৃথিবীর অন্য নদী; কিন্তু এই নদী
রাঙা মেঘ— হলুদ-হলুদ জ্যোৎস্না; চেয়ে দ্যাখো যদি;
অন্য সব আলো আর অন্ধকার এখানে ফুরালো;
লাল নীল মাছ মেঘ— ম্লান নীল জ্যোৎস্নার আলো
এইখানে; এইখানে মৃণালিনী ঘোষালের শব
ভাসিতেছে চিরদিন: নীল লাল রুপালি নীরব।

৬২