পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/১৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পূর্ণিমা বললে —'আমারও এত দিন পর একটা নিস্তার, মামার জন্য আমাদের ভাবনা ছিল বড্ড।'
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে পূর্ণিমা বললে, 'কিন্তু এই সমস্ত যদি তোমাকে দিয়ে হত।'
এক মিনিট চুপ।
পূর্ণিমা ব্যথায় জড়িয়ে বললে—'কিন্তু যা হবার নয়— তা হয় না; নইলে এ দু তিন বছরের ভেতর তুমি তেমন একটা চাকরি খুঁজে পেলে না? অনুপযুক্ত হলে আর-এক কথা ছিল—কিন্তু তাও তো নয়?'
পূর্ণিমা তেমনি কষ্টের সঙ্গে বললে –'কিন্তু দিনের পর যত দিন যায় মনে হয় তুমি কি উপযুক্ত!'
সন্তোষ শুনছিল।
পূর্ণিমা বললে 'অন্তত জামাইবাবুর কাছে তুমি আর কে? অত বড় চাকরি! অমন সাহেবি! সে কী সমৃদ্ধি ঐশ্বর্য্য আমরা ভাবতেও পারি না।'
আধ মিনিট চুপ থেকে বললে, 'অত শত কিছু চাই ও না। থাকলই-বা রূপগুণ টুক্কুর-—আমাদের মাঝারি জীবন হলেই চলে যায়। নিতান্ত অভাবে পড়ে না মরলেই হল। আজকালকার স্বদেশীর দিনে তবে সাহেবিই বা কে চায়? কিন্তু তাই বলে একটু সচ্ছলতাও কি থাকবার নয়? কতদিন আর এমন ছ্যাঁঁচড়ামির ভেতর দিয়ে টিকে থাকতে পারা যায়? টাকাকড়ির গর্ব চাইনে— কিন্তু মানুষের জীবনের জন্য যে-স্বাধীনতাটুকুর দরকার সেই হলেই হত। কিন্তু কিছুই তো হল না।'
সন্তোষ পূর্ণিমার হাতটা ঈষৎ আবেগের সঙ্গে টেনে নিয়ে বললে –‘ছি, এত হতাশ হয়ে পড়তে হয় কি? তোমাকে কতবার আমি বলেছি, সবই হবে শুধু একটু প্রতীক্ষা দরকার। তুমি দেখেছই তো, পূর্ণিমা, কত রকম যত্ন করছি আমি। নিশ্চয়ই হবে, নিশ্চয়ই হবে—ছি, অত নিরাশ হয়ে পড়তে হয় না লক্ষীটি-'
পূর্ণিমা সন্তোষের ঘাড়ে মাথা রেখে ব্যথায় অভিভূত হয়ে পড়ে বললে—'আর কত দিন অপেক্ষা করব আমি? আমি যে আর পারি না।'

সন্তোষ আশ্বাস দিয়ে বললে—'আর বেশি দিন নয়। শিগগিরই একটা কিছু হবে ভাবছি। না-হয় সেই যে-এজেন্সির কথাটা বলেছিলাম তোমাকে, তাই

১৫৮