পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/১০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

—“বেশ, তা না-করাই ভালো। কোনো কালেও যেন না-হয় আর।’ —সাজতে চেয়েছিলাম জীবনের সেবায়েৎ, সেজে বসেছি সেবাদাসী। উপভোগ নেই, অন্ধতা ও বেদনার ভোগ্য হয়ে বেড়াচ্ছি।’ —যাও, কলকাতায় গিয়ে একটা টিউশান জোগাড় করে নাও। এ দুর্যোগ আস্তেআস্তে ঘুচিয়ে ফেলো।’ —‘বাবা বলছিলেন চেতলা কিংবা উপ্টোডিঙ্গিতে টিউশান পেলে না-নেওয়াই ভাল।” মা ভূকুটি করে—‘কেন? নেবে না কেন? —‘এই-বৃষ্টি বাদলা, অনেকটা পথ হাঁটাহাটি করতে হয়। মেস থেকে প্রায় দু-তিন মাইল দূরে। —“সেইজন্য তোমার বাবার কষ্ট বুঝি? তুমি কি মনে কর পৃথিবীতে তুমি একই এ-রকম কষ্ট কর? পৃথিবীতে বাপ-মায়ের সস্তান তুমি কি শুধু একা? কত কৃতী, মেথরের কাজ করছে, তাদের বাপ নেই? কত ছেলে দেশ-ভূঁই তিন দিনের পথের পিছনে ফেলে গঞ্জে-গঞ্জে কয়লার কাজ করে দিন কাটিয়ে দিচ্ছে, তারা বাপ-মায়ের সন্তান না ?” —‘বাবাকে বলো না মা, কিন্তু তোমাকে বলছি, চেতলায় হোক বা ঢাকুরিয়ায় হোক দশ-দশ টাকার টিউশান পেলেও আমি নেব।” একটু চুপ থেকে মা—‘মেসের থেকে চেতলা কত দূরে ? —‘এই মাইল চারেক।” —‘কেন, ট্রামে গেলে হয় না? — ধরো, যদি দশ টাকা দিতে চায় তাহলে ট্রামে গেলে আর কী থাকে? খানিকক্ষণ চুপ থেকে—সকালবেলা যেও। মাথা নেড়ে—তাই যাব। কিন্তু ভয়, পৌঁছতে-পোছতে ছেলের স্কুলের বেলা হয়ে যায় যদি। —তাই তো; তা হলে সন্ধ্যার পর যাবে।' —তাই তারা যেতে বলবে।—‘কলকাতার ভিতরে টিউশান পাও না ?’ —‘পেলে নেব।” মা আমার মাথার দিকে হাত বাড়িয়ে—আমি আশীর্বাদ করি, তাই যেন পাও। একটু চিন্তিতভাবে—কিন্তু বাইরে যদি পাও?’ একটু নিস্তব্ধ থেকে—তা হলে একটা ছাতা কিনে নিও। ঘাড় নেড়ে বললাম—আচ্ছা।’ জননীর মুখ প্রসন্ন হয়ে উঠল। বললাম— বাতাসা আছে মা ?” —‘কেন ?" —‘একটু চিবুতাম।” У о о