পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

—“রাতে ভাতের সঙ্গে খেও ।” একটু চুপ থেকে—"মেজকাকার জন্য আজ লুচি ভাজবে না? -'रॅी।' —“আমাকে একখানা দেবে ?” — গুনে দশখানা ভাজি শুধু। —‘আজ না-হয় এগারো খানা ভাজলে। —‘কই ? তোমার বাবা তো এ-রকম বলেন না ? —লুচির জন্য বেগুন ভাজ বুঝি ? —‘হ্যা বেগুন ভাজি, ডিম ভাজি। ভাবছিলাম, লুচিটা পেলে খুকিকে ছিড়ে দেব খানিকটা। বাকিটা দেব কল্যাণীকে। তারা আমাকে রাজা মনে করবে নিশ্চয়ই। কিন্তু সন্ধ্যা উতরে রাত হয়ে গেল—তবুও কেউ এল না। জল ধরে গেছে। সন্ধ্যাব সময় বিরাজ এসে হাজির হল। ছেড়া জুতো পায়, মাথায় অজস্ৰ বেযদিপ চুল আইনস্টাইনের মতো, মাইনাস দশ-নং এর চশমা, উৎক্ষিপ্ত দাড়কাকের ডানার মতো বিরাট গোফ, ছেড়া ঢলঢলে নোংরা জামা। যেখানে-সেখানে কালির চ্যাপসা। বুকে নকল সোনার বোতাম। জমকালো জীবনের কাজ অনেক দিন আগেই শেয হয়ে গেছে—এখন জোর করে বেচারিকে আটকে রাখা শুধু। শরীর নিয়ে দরজার কাছে এসে দাঁড়াল। —‘এসো বিরাজ।” বাজখাই গলায় চিৎকার করে—যা চেপে জল এল। তোমাব এখানেই আস্তানা নিলাম। কী করছ, সন্ধ্যার সময় বসে-বসে ? বেরোও না।’ —‘না, জলের ভিতর আজ আর বেরোলাম না। অনেকদিন তোমার সঙ্গে দেখা নেই—কতদিন হবে হে? প্রায় বছরতিনেক ? —‘সে-সব মনে আছে কার? হ্যা, বসে-বসে হিশেব-কিতেব করি, আব কী ? তোমাদের বাড়িটা পথের ধারে পড়ল—ঝড়-জল—খেয়াল হল—এলাম চলে। —“বোসো।” একটা চেয়ার এগিয়ে দিলাম। —‘চেয়ার তোমার যা দেখছি তো, লোহার, কাঠের না কাঠালের ? ঠাকুদাদা কিনে দিয়ে গিয়েছিলেন বুঝি? বসলে ভাঙবে না তো। —ভাঙলে না-হয় আর-একখানা চেযার দেব।' —‘চেয়ারের দাক্ষিণ্য খুব আছে দেখি, চশমা খুলে হো হো করে হাসতে লাগল। —আজকাল প্রাকটিশ করছ?’ —‘হ্যা।’ —‘এখানকার বারেই? চলছে কেমন? —‘লগি গুতিয়ে চলেছি।’ —“শুনলাম ওকালতিতে সুবিধা হচ্ছে না কারো আজকাল ? > O>