পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

—‘জামাইষষ্ঠী এখন কী রে। এ তো মোটে ফাল্গুন মাস— —“তা তিনি গাওয়ালেন তো।” ■ 蟲—‘কদিন ছিলে সেখানে ? ‘. . —‘এই চোদ দিন ছিলাম—কাল ফিরে এসে ভাইপোকে বাটা মেরেছি মহারাজ—কী ঝামেলা বলুন তো—রঙের একটা পোচড় আদি তুলে দিতে পারে নি— চুপ করে ছিল প্রভাত। নিরঞ্জন—আমাকে দিন—দু-দিনেই ফকফকে শাদা করে এনে দিচ্ছি— —না, তোমাকে আর দেব না নিরঞ্জন।’ —‘পরশুই এনে দিচ্ছি মহারাজ—একটা রঙের আঁশও যদি থাকে তবে আমার দুটো কান আমার পায়ের নীচে কেটে রেখে যাব।’ কিন্তু রঙের একটা আঁশও সে ওঠাতে পারে নি। পরে প্রভাত বলেছিল—আচ্ছা লেবুর রসে রং ওঠে যে।’ মাথা নাড়ে নিরঞ্জন—তা কি হয় ? রং পেকে যায়।’ —আমরুল পাতার রসে ?” —টক জিনিশে রং পাকে—দিতে হয় জলের ছিটে; যত বড় বেয়াড়া রং হোক না কেন, কড়া রোদে তিন দিন জলের ছিটে দিয়ে ভাটিতে ফেললে—আচ্ছা, দেখবেন ? আপনার জামাগুলো দিন, আমি তিন দিনেই রং তুলে দিচ্ছি— নিরঞ্জন এই রকম। একবার একটি মশারি কাচতে নিয়ে প্রভাতকেবডড বিপাকে ফেলেছিল সে। ভোরের বেলা মশারি নিয়ে গেল, বললে—সন্ধ্যাসন্ধি দিয়ে যাব। কিন্তু তিন সপ্তাহের ভিতরে তার কোনো দেখাই নেই। লোকটিকে খুব ভালো লাগে তবুও; কাপড়ের বস্তা নিয়ে যখন সে হাজির হয় রকম গল্পই যে জানে ? সামান্য জিনিশও গাজিয়ে সরস করে বলবার ক্ষমতা আছে তার। কেন কথক হল না সে ? কিংবা মফস্বল কোর্টের মোক্তার ? যাত্রার দলে কিংবা থিয়েটারে যে সব চলতি অভিনয়—তার চেয়ে নিরঞ্জনের এই হাট-বাজার ব্যর্থতা-বেদন জীবন-মৃত্যুর কথা কত বেশি স্পষ্ট, মৃত্তিকাগন্ধী, গাজনের রসে ভরপুর— ধোপার কাজ এর জন্য নয়। এবার দেশে গিয়ে জামপুরের হাটের পথে নিরঞ্জনকে পাকড়াতে হবে—সেইখানেই সে আনাগোনা করে। তারপর তাকে ডেকে এনে বাড়ির পুবদিকের অশ্বখ গাছটার নীচে বসতে হবে একদিন দুপুরবেলা; এ চার বছরের মধ্যে কোনো নতুন বিমর্ষতা পেয়ে বসেছে না কি তাকে ? জীবন কি কায়ক্লেশে চলে, না কোনো নতুন আত্মিক অর্থ শিখেছে ? কাজে সে কি এখনো ফাকি দেয় ? যাত্রা-থিয়েটারের জন্য মন উড়উড় করে না কি আবার ? জীবনটা নেহাৎ নিশ্বাস ফেলে বেঁচে থাকার ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে হয়তো। কিংবা, হয়তো কোনো গুরুর কাছে মন্ত্র নিয়েছে; দাড়ি রেখেছে..বৈরাগী হয়েছে। যাই হোক না কেন, সে যতদিন বেঁচে আছে জীবনের হাট জমানো ব্যাপারের থেকে ফাকি দিয়ে সে কোথাও চলে যাবে না। মুখে তার গল্পের রং বদলাতে পারে কিন্তু ছাঁচ বদলাবে ন =ബജബ് > २२