পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/১৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গেলেন।" —‘কত দেনা ?” —“থাক মা—‘জুতো, জামা, পেনি, ফ্রক, ইজের, পাউডার কত কী, আমি বলি মেয়েকে মেমদের বেবীর মতো সাজিয়ে লাভ কী। কিন্তু তোমার বউয়ের যা মর্জি। কত ধানে সুন্দহ কালি দে নল মােজান —'খুকির জন্য তা হলে তো তোমাদের ঢের খরচ।’ —ওর মা-র জন্যও কি কম? তুমি গত বছর চৈত্র মাসে শেষ কিস্তিতে যে তিনশো টাকা পাঠালে, বউ কপালে চোখ তুলে বললে, মাসে-মাসে আমার স্বামী এতগুলো করে টাকা পাঠান অথচ আমার আর্শি নেই, সিন্দুর নেই, ভালো হাড়ের চিরুনি নেই, সিন্ধের ব্লাউজ নেই। সে এক কাণ্ড বাধালে। চৈত্র মাসে এই তাগুব বায়না।’ খাবার টেবিলের উপর একটা শুকনো পান ছিল। মুখে দিলাম। মা—আমাদের জন্য ওর সহানুভূতি এত ? কেন এমন হাতিপোষা বাচ্চা ? —টাকা তো ঢের খরচ হল, মেয়েটা দেখতে কেমন হয়েছে? —“সেই এক রত্তি, আর বাড়ে না।’ —তাই না কি ? -—“তা আমি ভাবি, বামনবীর হবে না কি আবার।’ —‘না তা হবে না; এক বছর মোটে বয়স। কত বাড়বে আর ? একটু চুপ থেকে, এখন হামাগুড়ি দেয় ? না হঁটে? —‘হাটতে পারে। টুকটুক করে হাটে, সলতের মতো হাত পা, খানিক হেঁটেই ধোকে।’ —তা হামা দেয় না আর, টুকটুক করে হাটে? দুপুরবেলা খাওয়া-দাওয়ার পর জানলার ভিতর দিকে তাকিয়ে সেই কৃষ্ণচূড়া গাছটাকে খুঁজছিলাম। কোথাও পেলাম না। বললাম—‘গাছটা কোথায় গেল ?’ —“কোন গাছ ? —সেই কৃষ্ণচূড়াটা। —*কে জানে ?” —‘কেন, গাছটা দেখ নি তুমি কোনোদিন ? —মনে আছে কার? —"বাঃ, কেমন সুন্দর ফুলে ভরে থাকত বোশেখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সমস্ত দুপুর ভরে ডালে-ডালে শালিখগুলো কিচিরমিচির করত; রাতের বেলায় নিস্তন্ধে লক্ষীপেচা এসে বসত।” —‘গতবার তো তুমি প্রায় বার-চোদ্দটা সুটকেশ এনেছিলে। বেশ সুন্দর চকোলেট বাদামি রঙের চামড়ার। সেগুলো কই? >Q ○