পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভবিষ্যতে এগুলো সরস নবীন জিনিশের মতো আবার আগ্রহে খুলে পড়ব বলে; চিংলিপট্টম ও মাদুরার কয়েকটা দিন কয়েকটা চিঠিতে খুব বিশদভাবে গাথা ছিল; অনুরাধাপুরের অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে তিনখানা চিঠি ছিল। বারান্দায় হরিণের ছাল পেতে, কিংবা অন্ধকার রাতে প্রদীপের আলোর কাছে মাদুর বিছিয়ে এ সব চিঠি কোনোদিনও পড়তে পারব না, আমি আর। চিঠিগুলো উইয়ের পেটের ভেতর গিয়ে তাদের শরীরের মাংস ও রস জোগাচ্ছে, নীড় বাধতে সহায়তা করছে তাদের, তাদের ডিম ও সস্তান-সন্ততির কাজে লাগছে। কিন্তু একটা পচা হোগলার বেড়া দিয়েও তো এই কাজ হত, কিংবা গর্ভস্রাবের রক্তমাখানো রাবিশ ন্যাকড়া দিয়ে ? আমার এই বিশ বছরের সঞ্চয়ের উপর হাত দেবার কী দরকার ছিল ? কিন্তু কাকে আমি প্রশ্ন করি ? এই অন্ধ পোকাগুলোকে? আমার অবসন্ন হৃদয়কে? জীবনের দিন-রাত্রির নিঃশব্দ সঞ্চারকে ? যে-খাতাগুলোতে নতুন কতকগুলো কবিতা লিখে রেখেছিলাম—তাও নষ্ট হয়ে গেছে। এ কবিতাগুলো কাউকে দেখাই নি। অনেকক্ষণ সময় কেটে যায়। অবাক হয়ে ভাবি জীবনের সবচেয়ে বড় প্রয়োজনীয় জিনিশ হচ্ছে নিজেকে স্থির রাখা। ভাবতেভাবতে অনেক মুহুর্ত কেটে যায়, এক সময় নিজেকে স্থির রাখতে চেষ্টা করি এই ভেবে যে আলেকজানড্রিয়ার লাইব্রেরি যখন ধ্বংস হয়ে যায় তখন এমন অনেক క్గా శా శాఖాణాళా নয়। শেষ পর্যন্ত শেক্সপিয়রের সমস্ত কাব্যও তো একদিন বরফের নীচে ধসে যাবে। পৃথিবীতে একটি মানুষও থাকবে না। কিন্তু তবুও থেকে-থেকে মনে হয় আলেকজানড্রিয়ার লাইব্রেরির সমস্ত লুপ্ত ঐশ্বর্যের চেয়েও আমার কবিতাগুলোর ইঙ্গিত ও মূল্য ঢের চমৎকার ছিল, শেক্সপিয়র যা দিতে পারে নি—তাই তো দিয়েছিলাম আমি। মেজকাকা এসে বললেন, উইয়ে খেয়ে ফেলেছে ? ॐा' সার্টিফিকেট বুঝি ? মাথা নেড়ে—‘হ্যা’ ‘কার সার্টিফিকেট ছিল ?’ বর্ধমানের মহারাজার’ হু, তা হলে চাকরি পেলে না যে বড় ? চুপ করে ছিলাম। মেজকাকা—সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন বটে আমাকে পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী মশাই। আমাকে সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন, সে আজ প্রায় ছেচল্লিশ বছর আগের কথা। সেই সার্টিফিকেট নিয়ে আমি কে-এস শেঠ-এর কাছে যাই। আবগারি ডিপার্টমেন্টে চাকরি আদায় করে নেই। ‘তা শাস্ত্রীমশাই শুনে কী বললেন, হয়তো অপেক্ষা করেছিলেন ? সাব ইনসপেক্টর হয়ে ঢুকেছিলেন ? ২৩