পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভালোই করেছ। চাকর পুষতে আমার মাসে নিট পঞ্চাশটি টাকা খরচ হয়ে যায়। অথচ নেমকহারামের ধাড়ি সব, ও-পাপ রাখতে হয় না, তাছাড়া দাদার যা ইনকাম, চাকর-বাকর রেখে মুখে রক্ত উঠে বুড়ো বয়সে মরবে এ-মানুষটা। আমিও দিতে পারি আপনার পায়ে মালিশ করে।’ আচ্ছা, তুমি কেন দেবে ? বউমা থাকতে—সেটা কি ভালো দেখায়? বউমার যদি কোনো আপত্তি থাকে—’ না, আপত্তি কিছু নেই। হয়তো লজ্জা করতে পারে—নিজের শ্বশুরকে যেমনটি দেখে আমাকে তেমনটি নাও মনে করতে পারে হয়তো।” ‘কেন মনে করবে না? আপনি বাবার সহোদর ভাই।’ আহা, এদের মনের মধ্যে কোথায় কী যে খোচ আমরা কি তা বুঝতে পারি? গম্ভীর করে, নিজের স্ত্রীকেও কি ছাই আমি ভালো করে চিনি?’ ‘আমিই তাহলে মালিশ করে দেব মেজকাকা।’ তাই দিও। বউমার নাম যে মুখে এনেছিলাম—বলো তো তোমার বাবার কাছে গিয়ে খৎ দিয়ে আসি।” ‘গাউট হয়েছে আপনার কত দিন থেকে?’ ডিম-মাংসের পরিণাম আর কী? তবে বাড়াবাড়ি হয়েছে দু-তিন বছর ধরে। মাংস-ডিম খান এখনো ?” ‘খুব কম খাই। তবুও ভগবানের আশীর্বাদ বলতে হবে এপেন্ডিসাইটিস হয় নি, স্টোন হয় নি, গলস্টোন হয় নি, ব্লাডপ্রেসার হয় নি, গাউটের উপর দিয়ে আপদ গেছে সব।’ শুনলাম, সেজকাকার নাকি ব্লাড প্রেসার হয়েছে? কার? রমেশের ? তা তুমি আজ শুনলে ? গত বছর তো মারা যাবার উপক্রম হয়েছিল। তাই নাকি?’ ‘জানো না ? বাপের ভায়েদেরও খবর রাখো না ? একটা হাত তুলে মেজকাকা—“তোমাদেরই বা বলব কী? দাদাই কি খোঁজখবর রাখেন আমাদের ? কোলের থেকে ছড়িটা তুলে নিয়ে খোড়াতে-খোঁড়াতে মেজকাকা—বিধাতার কৃপায় আমি তিনশো-চারশো টাকা পেনশান পাচ্ছি। কাচা টাকায় অনেক ঝাল মিটে যায় কিন্তু তবুও আমাদের মনেপ্রাণে কি কোনো বেদনা থাকতে পারে না? যাক, ভগবান আছেন, তিনিই দেখবেন, বিচারও করবেন তিনিই। বারোশো টাকা মাইনে পেয়ে ডিম-মাংস, হ্যাম, বেকন, কোকোজ্যামের পিণ্ডি চটকে জীবন কাটিয়ে দিল রমেশ । রেস খেলে, বছর-বছর একটা ব্যবসা, দিন-রাত সিগারেট আর ইংরেজি বই, ব্লাডপ্রেসারের কী দোষ? পুলিশ ইন্সপেক্টর হয়ে এই সব বই পড়েন সেজকাকা ? একটু আশ্চর্য হয়ে মেজকাকার দিকে তাকালাম। ওপেন হাইম, এডগার ওয়ালেস এই সব। অবসর পেলেই দিন-রাত এই সব নিয়ে পড়ে থাকে। ওঃ এইগুলো ?” ২৬