পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুপি মাঝে-মাঝে ব্যবহার করি বটে ঠাকুরপো' আমাকে ঠাকুরপো ডেকো না—’ “ডাকব না ?” বরং সুরেশবাবু ডেকো। বউঠান। একটা ছাতাটাতা ব্যবহার কর না কেন ? বাঃ পোলাও রেধেছ আজ ? পোলাও মেজকাকার জন্যই রাধা হয়েছিল, ছোট এক ডেকচি আন্দাজ। ইলিশ মাছ ভাজাও তো গোটা দশেক দিয়েছ দেখছি—বেশ বেশ।’ খেতে-খেতে, আচ্ছা এই তেপয়টা তোমরা কোথায় পেলে—যেটার ওপর থালা রেখে খাচ্ছি ?” ‘কেন ? অসুবিধা হচ্ছে? না, সে জন্য না, এমন ছবি-ফুল-কাটা তেপয় তো পাড়াগায় দেশে দেখা যায় না বউঠান। উনি কোথেকে এনেছিলেন।’ ‘দাদা কি খেয়েছেন ?” 'ॐा।' ওঃ, দাদার খাওয়া হয়ে গেছে বুঝি— পিসিমা বললেন, ‘দাদা খেয়েছেন ওই রান্নাঘরে গিয়ে।’ ‘কেন, কেন, এ-রকম ব্যবস্থা কেন বউঠান ? আমি খাব টেবিলে বসে, আর তিনি জল-ঝড়ে ভিজে—তেপয়টা কি কাঠের, বড় বউঠান ? “দেখ তো খোকা, সেগুনের বোধ করি।’ বললাম, হয়তো মেহগিনির।’ মেজকাকা চোখ পাজলে হেসে—‘পাগল না ছাগল, হবে বড় জোর জারুলের। দাদা তো কিনেছেন—না হয় কেরোসিন কাঠাল কাঠের।’ মা একটু বিক্ষুব্ধ হয়ে জানলার দিকে তাকালেন। কী যেন বলতে গিয়ে থেমে গেলেন। মেজকাকা, আমাদের কলকাতার বাড়ির আসবাবপত্র সমস্ত ওক কাঠের কিংবা মেহগিনির। দেখে আসবে গিয়ে বড়বউ একবার।’ পিসিমা—“মেজদার বাড়ি, কিসে আর কিসে, বাঘে আর রামছাগলে, কী আর, ও যে ইন্দ্রের বৈঠকখানা।’ একবার তাকালেন। " খেতে খেতে, “তোমরা যে ভরন-কাসার থালায় করে ভাত দাও, আমাদের ওখানে তো সে রেওয়াজ নেই, আমরা খাই ডিশে, ড্রেসডেন চায়নার ফুলকাটা ডিশ দেখিস নি? আমাদের চাকর-বাকরও সেখানে থালায় খেতে চায় না। সববায়ের জন্য ডিশ। পোলাওটা কেমন কড়কড়ে হয়েছে, ঘি দিতে কার্পণ্য করেছ বউঠান। ○>