পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পিসিমার দিকে তাকিয়ে মেজকাকা, জানলে, পোলাও রাধে তোমাদের মেজদিদি—ঘি, কিশমিশ, পেস্তা, বাদাম, জাফরান কত কী যে দেয়। যেমন পোলাও, তেমনি ছানার পায়েস, তেমনি মাংস—সুরেন খাস্তগিরের মেয়ে তো আর যে-সে জীব নয় বাবা।” কিন্তু মেজদিদি তো ইদানীং খাটেই শুয়ে থাকেন। হ্যা ইদানীং থাকেন বটে—’ ‘প্রায় দশ-বারো বছর ধরে আমি তো তাকে খাটে শুয়ে-শুয়ে পান জর্দা—’ বাধা দিয়ে মেজকাকা—“সেই ভালো রে; বড়লোকের বউ, উঠবার কী দরকার বল ? আট-দশটা বাবুর্চি খানশামা বরকন্দাজ রয়েছে, গিন্নিরই যদি নিজের হাতে নেড়ে কাজ করতে হল তো এ অনামুখোগুলোকে রাখা কেন? মা-র দিকে তাকিয়ে মেজকাকা, তুমি আজ পোলাও রেধে বসলে বউঠান, কড়কড়ে পোলাও। আমি ভেবেছিলাম টেকির শাক একটু কাসুন্দি দিয়ে খাব। মা একটু অপ্রস্তুত হয়ে, কাল খাবেন। ‘কাল সকালে ?” ‘বেশ, তাই হবে।’ কাল ইলিশ মাছ পাওয়া যাবে? বাজারে আনতে দেব।” না, গঙ্গার ইলিশের মতো স্বাদ তো এতে নেই।’ যা বর্ষা— এত বৃষ্টিতে এদেশের ইলিশের বাঝ ধুয়ে জল হয়ে যায়। ভালো মাছ পাবেন বোশেখ-জ্যৈষ্ঠতে।’ ভালো হোক, মন্দ হোক, ইলিশই যেন আসে। আর খুব বড় দেখে চিংড়ি, গলদা, আমার জন্য মাছের ডিমের বড়া করো, মুর্গির ছোট ডিম ওমলেটের মতো করে ভেজো। কুমড়ো ফুল পাওয়া যায়? ব্যাসন দিয়ে ভেজো তো, বড়ি দিয়ে একটা পালং শাকের তরকারি রেধো তো; তোমাদের গেরস্ত ঘরে আমচুর আছে না বউঠান? আছে।’ থাকবারই কথা; আমচুরের টক মন্দ লাগে না। যারা বাগিয়ে রাঁধতে পারে তাদের হাতে। আমাদের বাবুৰ্চিটা শিখেছে—মালতী শিখিয়েছে। মালতী একজন পাকা গিন্নি, বুঝলে।’ তা হবেই তো, বড়লোকের মেয়ের হাটতে-কাশতেও রূপ খুলে যায়।’ তবে, এসব ধরণের রান্না সে রাধে না, কাটলেট, কাস্টার্ড, পুডিং। মা—'কাস্টার্ড, পুডিং কী? মেজকাকা দাঁত বার করে হেসে, সে আছে এক রকম মাকাল ফল। যাক তুমি এখন এটো পাত কুড়োও বড়বউ। দাঁড়িয়ে থাকলে তো তোমাদেরই রাত বাড়বে। এটো কুড়িয়ে থালা নিয়ে মা চলে যাচ্ছিলেন। মেজকাকা খড়কে দিয়ে দাঁত খুঁটতেখুঁটতে, আবার অন্ধকারের মধ্যে ডুব মারবে বুঝি বউঠান ? ‘হ্যা যাচ্ছি।’ ‘কোথায় চললে ?” “ঘাটে।’ “থালা বাসন মাজতে ?” \రిచి