পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যুদ্ধ যে আজকাল চলে না, বাবা কি তা জানেন? দশ টাকা না হোক, বিশ টাকা পেলে ?” . . . বাবা বললেন—‘কলকাতায় গিয়ে চা খাও না? —বউমার ঘরে একটা স্পিরিটের স্টোভ পড়ে আছে, খুকি হবার সময় কেনা হয়েছিল, সেইটে নিয়ে নেও।’ —আচ্ছা! —‘এক বোতল স্পিরিট কিনে নেবে—খানিকটা খুচরো চা নিজে তৈরি করে খাবে।” —“তা খাওয়া যায়।’ —আর খানিকটা বাতাসা, চা-র সঙ্গে। সন্ধ্যার দিকে কী করো ? —“যদি টিউশন থাকে তো ছেলে পড়াতে যাই।’ —আর যদি না-থাকে?’ —তা হলে ফুটপথে বেড়িয়ে-বেড়িয়ে, ওল্ড বুক শপের দু-চারখানা বই নেড়ে দেখি, এক-একটার কাছে গিয়ে দাড়াই, আবার হাটি, চায়ের দোকানের খবরের কাগজ নিয়ে চুপচাপ অনেকক্ষণ বসে থাকি। —"বাঃ, এ সব কি মানুষের ভালো লাগে? —না, আগে ভালো লাগত না একদম, কিন্তু কয়েক বছর ধরে তালিম হয়ে গেছে।’ —কিন্তু তবুও এ তো সত্যিকারের জীবন নয়।’ —তা হয়তো নয়—আমার কি ইচ্ছে করে জানো?” বাবা তাকালেন আমার দিকে। বললাম—মস্ত বড় একটা মাঠের মধ্যে কুঁড়েঘর বানিয়ে থাকি; পাশে মেঘনা কিংবা কর্ণফুলী, অথবা ইছামতী। পেটের জন্য কোনো চিন্তা থাকে না, দিনরাত লিখি আর পড়ি। দিগন্তবিস্তৃত সোনালি খড়ের মাঠের কিনারে বেড়াই, লাল আকাশ ভেঙে সন্ধ্যার দাড়কাকগুলোকে ঘরে ফিরে চলে যেতে দেখি। বাবা চুপ করে ছিলেন। বললাম—“কিন্তু এ হয়তো শখ হল, পলায়ন হল, জীবন হল না, জীবন হয়তো ভিড়ের মধ্যে মিশে যা করতে ইচ্ছা করে না, ভাবতে ভালো লাগে না, সেই অপ্রেমের কাজ ও চিন্তার জন্য সহানুভূতি সাহায্যের চেষ্টা। —কেন? —মতিগতির পার্থক্য বেড়ে যাচ্ছে হয়তো—’ বাবা একটু চুপ থেকে—তারা হয়তো সাংসারিক সফলতা লাভ করছে। 88