পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাটির দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইল সে। আমি চুপ করে বসে ছিলাম। চটি জুতোর শব্দে চমক ভাঙল। তাকিয়ে দেখি বাবা এসে দাড়িয়েছেন। ধুতির খুঁট গায়ে, খুটের ভিতর থেকে একটা মোম বের করে বললেন, ‘এই নাও। খুকি কি ঘুমিয়েছে? —‘ঘুমুচ্ছে বোধ করি।’ —হা ঘুমোক। মশারিটা ফেলে দিও। ফেলবার আগে মোম জুলিয়ে ভালো করে বিছানাটা একবার দেখে নিও।” কল্যাণীর পিঠে আস্তে-আস্তে দু-তিন বার হাত বুলিয়ে চলে গেলেন তিনি। কল্যাণী চাপা গলায়—এ কী ভয়ানক অন্যায় তোমার বাবার।’ —‘কী রকম?” —আমি এখানে আছি। অথচ তিনি এ ঘরে ঢুকলেন। —সহজ ভাবেই ঢুকেছেন। কল্যাণী মাথা নেড়ে—আমার নিজের বাবা হলে এ-রকম অবস্থায় কিছুতেই ঢুকতেন না।” —'খুকিকে বড্ড ভালোবাসেন কি-না বাবা।’ —তা হোক—তাই বলে এত রাত্রে স্বামী-স্ত্রীর ঘরে একজন পুরুষমানুষ হয়ে ঢুকবেন তিনি?’ কল্যাণী চোখ কপালে তুলে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। —সত্তর বছরের বুড়ো মানুষের পক্ষে এ জিনিশ এমন কিছু অশোভন নয়।’ নুজিলন্ধর আলাল চেয়ে ভালো নমুনা তো কোনোদিন দাও নি।’ —ছি, আস্তে। শুনলে কী মনে করবেন তারা।’ —“আমার বাবা হলে—হোক না মেয়ে-জামাই, তাদের ঘরের ত্রিসীমানায়ও আসত না এত রাত্রে।” একটু চুপ থেকে, আমার বাপের বাড়ির রুচি-সংযম তোমরা সে-সবের কল্পনাই বা করবে কী করে। অবাক হয়ে ভাবি, কোথায় ছিলাম, কোথায় এসেছি। বাবা তার বিছানার থেকে গলা খাকরে—আমার মনে হয় তোমার ঘরে বাতাসা কিংবা গুড়ের টুকরো পড়েছিল হেম। —তা হবে।’ —‘হ্যা, তার গন্ধে-গন্ধে বিষ-পিপড়ে এসে জমেছে।’ —তাই মনে হয়।’ মা বললেন—বর্ষাকালে অনেক সময় পোকা-ফড়িং মরে থাকে, দেখিস নি খোকা ? —‘হ্যা দেখেছি।’ —“সেই জন্য এত পিপড়ে হয়।’ —‘তা ঠিক। কাল ঘরটা ভালো করে ঝাড় দিয়ে ফেলতে হবে।’ —‘হ্যা খুব ভালো করে। বাবা—‘ও, ওই যে বাতি নিয়ে পড়ি না আমরা রাত্রে, তখন লণ্ঠনের চার পাশে অনেক পোকা মরে থাকে, সেইজন্যই এত পিপড়ে জমে বুঝি ? মা—“হ্যা, বিশেষত এই বর্ষার সময় অন্য কোথাও খাবার পায় না কি-না।’ ○ 。