পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

—না, আমার বোধহয়, পেট পরিষ্কার না হয়ে খুকির এই রকম পাঁচড়া হচ্ছে।’ একটু চুপ থেকে—অবশ্য কলকাতায় এ চোদ্দ বছর যে খুব সুষ্ঠভাবে কাটিয়েছি তা নয়।’ —“আচ্ছা বেশ। —"দৈন্য নানাভাবেই এসেছে।’ —‘একটা বিড়ালের ছানা কাদছে না।’ —‘হ্যা’ —“কোথায় ?” —‘পশ্চিম দিকের মাঠে বোধ করি।’ —‘নিয়ে এলে হয় না ? —‘ছানাটাকে এনে কোথায় রাখবে ?” —আমার এই কোঠায় রাখতে পার, ওই যে বেতের বড় ঝুড়িটা আছে ওরই ভিতর কয়েক টুকরো ন্যাকড়া রেখে শুইয়ে দিলে হয়তো। —কিন্তু কোনো এক জায়গায় তিষ্ঠবে না যে, ঘুরে-ঘুরে কাদবে।’ —হয়তো মাকে খুঁজছে।" —মা-ই-বা ওর আসে না কেন ?? —“সে বেঁচে আছে, না মরে গেছে, বিধাতা জানেন; বেঁচে থাকলেও হয়তো দু-দশটা মাঠ পেরিয়ে। সারা গায়ে উনানের কালি মাখিয়ে। শূন্য ভাতের হাড়ির পাশে বসে জীবনের প্রবঞ্চনার কথা ভাবছে।’ —আমি আর তোমার মা, তুমি আর কল্যাণী পরস্পরের আরো ঢের কাছে; কিন্তু আমাদের অবস্থাও অনেকটা ওই রকম, কী বলো হেম ? টিটকারি দিয়ে বাবা একটু হাসলেন। পরক্ষণেই—না, তা নয়, ওই ছানাটার বেদনা যে কী গভীর তা আমরা ধারণাও করতে পারি না।’ বিছানার থেকে নেমে এসে টেবিলের লণ্ঠনটা হাতে তুলে নিলেন। বললাম— কোথায় যাচ্ছ ?” —“দেখি, বাচ্চাটাকে নিয়ে আসি। —“কিন্তু আনলে তো কেঁদেকেটে একাকার করবে।’ —তা করুক, তবু আশ্রয় পাবে তো। —‘এ-ঘরে কারো যে ঘুম হবে না তা হলে; মা আর কল্যাণী হয়তো বিরক্ত হবে।’ লণ্ঠনটা দু-তিনবার দুলিয়ে-দুলিয়ে বাবা—‘একটু গরম দুধ দিলে হয়তো কান্না থামবে বাচ্চাটার। . —দুধ এত রাত্রে কোথায় পাব ? —আচ্ছা, তোমার মাকে জিজ্ঞেস করে এসো দেখি।” দক্ষিণের ঘরের থেকে ফিরে এসে বললাম—না, দুধ নেই। ছানাটার কান্নাও আর শোনা যাচ্ছিল না, খুব চেপে জল এল। জীবনের গভীর উদাসীনতা আমাদের পেয়ে বসল। সৃষ্টির ক্ষমাহীনতার রহস্যময় উপেক্ষার সাথে গ্রন্থিবদ্ধ হয়ে অন্ধকারের bア(?