পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সব জান তুমি; অত্যন্ত কর্তব্যপরায়ণ হিতাকাঙ্ক্ষীর মতো দূরে সরে থাক, এক মুহুর্তের জন্যও বাধা দিতে আস না। এ জন্য শ্রদ্ধা করি আমি তোমাকে।’ দেশলাইটা রেখে দিলাম। . কল্যাণী—“কিন্তু চলে যেতে হবে আমাকে কাল।” —“কাল ?’ মাথা নেড়ে—হ্যা।’ —“কোথায় ?” —‘এমন বিশেষ কোথাও না। আলমোড়া-মুসুরি পাহাড়ে নয়, যাব আমি, একটু থেমে-থেমে—‘মেদিনীপুরের একটি পাড়াগাঁয়ে ? —‘কেন ?? —দরকার আছে।’ —‘মেদিনীপুরে তোমার কে আছেন?’ —আত্মীয়-স্বজন কেউ নেই।’ —‘নেই ? —না, হেমন্তবাবু আছেন আর র্তার স্ত্রী। —‘কে তারা ?’ —‘চিনবে না, সেই বাসাতেই যাব। আজ বিকেলে একটা চিঠি এসেছে।’ —‘হেমন্তবাবুর ? —না, তার স্ত্রীর।’ —“তোমাকে যেতে লিখেছেন ?? —‘যেতে অবিশ্যি আমাকে লেখেন নি, কী ভরসায় যেতে লিখবেন। তারা অত্যন্ত ভদ্রমানুষ—নিজেরা সংসার করছেন, পরের সংসারের উপর তাদের সহানুভূতি আছে। —তবে তুমিই বুঝি যাওয়া ঠিক করলে ? —‘হ্যা, একটি মানুষ মরছে—তার মৃত্যুশয্যায় তার কাছে আমি না থাকলে চলবে না।” বলে, কল্যাণী চোখে আঁচল দিয়ে আবার কাদতে লাগল। খানিকক্ষণ পর—চোখ মুছতে-মুছতে, থাইসিসের রোগী মেদিনীপুরের একটা গ্রামে পড়ে আছে এই বর্ষা বাদলের সময়ে।’ —বডড খারাপ কথা—কেন, বাপ-মা নেই তার ?” —‘নির্মলদার ? কিচ্ছ নেই। আমার উপরেই তার সব নির্ভর করে— —‘নির্মলদা ?’ —‘হ্যা’ প্রায় পনেরো বছর ধরে মুখ চেয়ে থাকার মতো একটু বিস্মিত হয়ে ভাবছিলাম, কে কার মুখ চেয়ে থেকেছে পনেরো বছর ? কল্যাণী নির্মলের ? না নির্মল কল্যাণীর ? প্রয়োজন মতো অস্পষ্টতা দিয়ে এই সম্পর্কে নিজের বক্তব্যটুকুকে বেশ আবরণ দিয়ে রেখেছে কল্যাণী। —‘হেমন্তবাবুদের কিছু হন না কি?’ —‘কে? নির্মলদা ? কিচ্ছ না, ওরা ভদ্রসদ্ৰ মানুষ, দয়া করে তাকে স্থান দিয়েছেন। —তা নির্মলের এই রকম অবস্থা কেন ? পৃথিবীতে সে একেবারেই একা বুঝি ? brゲ