পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

—“হ্যা।’ —‘এ-রকম হল কেন? ইতিহাস কী? —দু-জন কাকা আছেন বুঝি, তবে তারা ওর কোনো খোঁজখবর নেন না। ম্যাট্রিক পাশ করেই স্বদেশী করে জেলে যায়।’ —‘কে ? নির্মল ?’ —‘হ্যা, সেই থেকেই জেলেই এক-রকম। এক সময় জেলের থেকে বেরিয়ে চামড়া ট্যানিং শিখবার চেষ্টা করেছিল। —তা শিখল না যে ? —টাকা নেই, কড়ি নেই, স্বদেশীর দিকে ঝোক, কোনো একটা মার্কেট থেকে ধবে নিয়ে গেল।’ —“তোমার সঙ্গে আলাপ হল কোথায় ? —“আমাদেব বাড়ির পাশেব বাড়িতেই ওরা থাকত। — কোথায় ?” —তখন আমরা মানভূমে ছিলাম। মানভূমে প্রায় দশ বছর থাকা, তারপর বাবা বাগনানে এলেন—বছর দুই-তিন পরে কালীঘাটে একটা বাসা ভাড়া করে ছিলেন—সেইখানেই বাবা মারা যান। সেই রাত্রে যে— কল্যাণী জানলার দিকে তাকিয়ে—তা হলে কালই যাব আমি।” —তা যেও; দুঃখেব বিষয় তোমার কোনো টাকাকড়ি নেই।’ —“আমার গয়নার বাক্স সঙ্গে নেব, কলকাতায় বিক্রি করে নেব।” —কার সঙ্গে যাবে ?” তুমি দিযে আসতে পারবে না ? একটু চিন্তা করে—রবিকে যদি দেই তা হলে হবে না? —ববি ঠাকুরপোকে? —‘হ্যা।’ —তা হলে তো বেশ ভালোই হবে, আমার মনে হয় তোমার না-যাওয়াই ভালো, আমরা স্বামী-স্ত্রী গিয়ে উঠব, তাতে নির্মলদা আঘাত পাবে। মিছিমিছি তাকে অযথা কষ্ট দিয়ে লাভ কী? তাকে দুঃখ দেবার জন্য যাচ্ছি না তো আমি।” মাথা নেড়ে—না।" —যাতে উৎসাহ পায়, ভরসা বোধ করে, জীবনের সম্বন্ধে আশা ফিরে আসে, আলো-বাতাস ভালো লাগে, ভবিষ্যতের প্রতি বিশ্বাস হয়, সেইজন্যই তো যাওয়া।’ বলে বালিশে মাথা গুজে অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে রইল কল্যাণী। উঠল যখন, তখন প্রায় ভোর হয়ে এসেছে। বললে—“তুমি এখনো বসে আছ ? —‘হ্যা, গোটা তিনেক সিগারেট খেলাম বসে।” –তাই নাকি?’ —‘টেবও পাও নি বুঝি ?’ —না তো ’ • —‘এক-এক সময় মানুষের মন বড় অপার্থিব হয়ে পড়ে কল্যাণী, পৃথিবীর স্থল সামান্য কদৰ্য জিনিশগুলো সম্বন্ধে খেয়ালও থাকে না—মন থাকে জীবনের মহামূল্য br>