পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

—‘কেন গয়নার বাক্স নিয়ে যাবে—কলকাতায় বিক্রি করে নেবে।’ —আহা! কেই-বা বিক্রি করে দেবে।’ —‘কেন ? রবি ?? —রবি ছেলেমানুষ। সে কি আর পারবে?’ —তুমি জান না কল্যাণী, রবি এ-বিষয়ে খুব ওস্তাদ, নেহাৎ ছেলেমানুষ নয়, তোমার চেয়ে ছ-সাত বছরের বড়, ব্যবসাদারের ছেলে।’ একটু থেমে—তা, যদি তুমি তাই মনে করো, আমি এখন থেকেই বিক্রি করে দিতে পারি।’ —না, থাক, এখানে বিক্রি করে দরকার নেই, লোকে কী মনে করবে।’ —“কিংবা কলকাতায় তোমাদের সঙ্গে গিয়ে—’ —‘এই তো একমাত্র গয়নার বাক্স আমার সম্বল, কিন্তু গয়নাগুলো আজ যদি বিক্রি করে ফেলি, একদিন অভাবের সময় ? —আজও তো কম অভাবের দিন নয়।’ —‘কী রকম ?” —"নিৰ্মলের মা নেই, বাপ নেই, একটা ভালো চেঞ্জের জায়গায় যায় এমন সঙ্গতি নেই বেচারির—’ —ভালো চেঞ্জের জায়গায় নিয়ে গেলে কিছু হয় কী ? বলো ?” —‘হ্যা।’ —শিমুলতলা, মধুপুর ? —‘কিংবা ধর্মপুর হতে পারে, ভাওয়ালি হতে পারে। —‘সে ঢের টাকা লাগে তাতে।’ —টাকা তো লাগবেই।’ —তাছাড়া আগের থেকে বেড-এর ব্যবস্থা করে নিতে হয়। আমি মেয়েমানুষ কী করে এত সব পারব ?” —’হেমন্তবাবুদের সাথে পরামর্শ করবে, দরকার হলে আমিও সঙ্গে যেতে পারি। —“মোটমাট সে ঢের টাকার দরকার, তোমারও কোনো চাকরি-বাকরি নেই, গয়না বিক্রি করলে চার-পাঁচশো টাকা বড় জোর পাব।” মাথা নেড়ে—‘পাঁচশো তো খুবই পাবে। —কিন্তু খুকির কথাও তো ভাবতে হয়, মা হিশেবে তার উপর আমার দায়িত্ব রয়েছে।’ চুপ করে মাটির দিকে তাকিয়ে রইলাম। কল্যাণী—“গয়নার বাক্স তো আমারই জিনিশ শুধু নয়—এ তো খুকির জিনিশ। বেচারাকে বঞ্চিত করবার কোনো অধিকার আমার আছে কি?’ — গয়নাগুলো এ-রকম কাজে লাগিয়েছ, ভবিষ্যতে হয়তো এ কথা শুনে খুকি অপ্রসন্ন হবে না।’ —“কিন্তু যদি হয় ?” —তাহলে তার অপ্রীতিকে উপেক্ষা করলে অধৰ্ম হবে না আমাদের।” কল্যাণী, একটু ইতস্তত—শুধু তো এই নয়, ভগবান না করুন—কিন্তু বাবা চলে গেলে আমাদের কটা দিন অন্তত দাড়াতে হবে তো।” >>