পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

—‘সেবা বরং তুমিই করবে; নাঃ, কলকাতায় আজকাল বড় যক্ষ্মা হচ্ছে। আমার যদি হয় তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই।’ মা চুপ করে ছিলেন। —বয়স বেড়ে গেছে, চাকরি নেই, শরীরের ধাত চিরকালই খারাপ; টিকটিক করে মনটা ছিল, সেও গেছে যেন ছিড়ে টুকরো হয়ে। তারপর দিনরাত কলকাতার পথে-পথে ঘোরা। শ্রাবণ ভাদ্রের বৃষ্টি ও রোদ। মেস-এর যাচ্ছেতাই খাওয়া। এই বয়সে এ-রকম মনমরা হৃদয় নিয়ে যদি দেখি রোজই অল্প-অল্প জ্বর হচ্ছে? মা—‘মেসে কী খেতে দেয় ?” —তা তো তুমি জানোই।’ —আমাদের বাড়ির চেয়েও খারাপ ? —আমরা অন্তত ভালো ডাল পাই আর খানিকটা দুধ। —ওখানে দুধ দেয় না ভাতের সঙ্গে ? —দুধ খেতে হলে পয়সা দিয়ে কিনে খেতে হয়।’ —অল্প-অল্প জুর হয় নাকি তোমার ?’ —‘না, তবে মাঝে-মাঝে মনে হয় যেন শরীর গরম হয়েছে—কেমন অরুচি হয়, কিছু ভালো লাগে না। একটা থামোমিটার থাকলে দেখা যেত কী রকম টেম্পারেচার হয়, একটা চার্ট তৈরি করতে পারতাম।” —‘জুর-জুর বোধ করলে কী করো তখন ? —বিছানায় শুয়ে থাকি, আর ভাবি, ভগবান, আর যাই হোক, টি-বি-র বীজ যেন শরীরের থেকে না বেরোয়।’ —‘একটা থামোমিটার কিনলে পার ?’ —“কিনব-কিনব করে আর হয়ে ওঠে না।’ — ডাক্তার দেখালেই পার।’ মাথা নেড়ে—’হয়তো বলে দেবে স্পটামের মধ্যে যক্ষ্মার বীজ, তখন কী উপায় ? —‘তা বলবে কেন ? যক্ষ্মা তোমার হয় নি; কেনই-বা হবে ? তোমার বাবা তো সত্তর বছরের পরমায়ু নিয়ে বেঁচে আছেন, আমিও তো এত জলঝড়ে ভিজি, কিছু হয় না, আমার মনে হয় ডাক্তার দেখিয়ে খানিকটা কুইনিন খেলে ঠিক হয়, কিংবা একটা মিক্সচার।’ —‘এবার গিয়ে স্পটাম পরীক্ষা করাব ভাবছি। মা চুপ করেছিলেন। —‘রক্তও পরীক্ষা করাব।’ —‘মিছিমিছি টাকা খরচ করবি কেন ? তোর মেজকাকার সঙ্গে অনেক ভালো ডাক্তারের জানাশোনা আছে। বিনি পয়সায় করিয়ে দেবে।’ —‘কী দরকার, কতই-বা আর নেবে ? —আচ্ছা, আমি না হয় সুরেশবাবুকে বলব আজ, তিনি খুব খুশি হয়েই রাজি হবেন। — না, থাক, বলতে যেও না।’ —‘সঙ্কোচ করছিস কেন হেম? আমি তো খুব নিঃসঙ্কোচে বলতে পারি। একটু চুপ থেকে—অন্তত আজ তুমি বলতে যেও না, দু-তিনটে দিন ভেবে দেখি। & 8