পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কোথাও চলে যাবে কি সে ? “দণতকপাটি মারলে যে নিশীথ । আমি বিয়ে করব না ? বয়স অামার সাতচল্লিশ । আজি যদি না করি তো কবে করব আর ; স্ত্রীলোক না হলে চলে পুরুষমানুষের ? তুমি নিজে চালাতে পেরেছ ? যে-দরজাটা দিয়ে ঢুকেছে সেটা খোলাই আছে, তাকিয়ে দেখল নিশীথ । টং টং করতে একটা রিকশ চলে যাচ্ছে । মাল চাপিয়ে সেও চলে যাবে নাকি ? সাতচল্লিশ বছরে জিতেন দাশগুপ্ত বিয়ে করল । একে-একে সকলেই তো করেছে । বাকি ছিল জিতেন ; লেক রোডের এ বাড়িটা জিতেনের । চমৎকার একটা আস্তান ছিল এটা নিশীথের—কলকাতায় এলেই । জিতেন যে ভাবুক মানুষ নয়, তা নয়—কিন্তু ভাবগ্রাহী বেশি, বুঝদার বেশি ; মানুষের কোথায় খোচা লেগেছে, কী করে তা ঘুচিয়ে দেওয়া যায়, কী করে সুবিধে করে দেওয়া যায় মানুষকে, জিতেন যেন তাড়াতাড়ি ধরে ফেলতে পারত, নিজেরই গরজে যেন সুব্যবস্থা করে দেবার ক্ষমতা রাখত ; কিন্তু জিতেন তো বিয়ে করেছে । নির্মল, সোমেন, রথীন, মুকুটমণি, অনিমেষ ঘটক, বিজয় মিত্তির, পরেশ দত্ত —একে-একে সকলেই তো গেল, সে নিজেও তো প্রণয় বছর ত্রিশ আগে । বাকি ছিল জিতেন দাশগুপ্ত । ‘কোনো খবর পেলুম না তো । কবে বিয়ে করলে ?’ ‘কাউকেই খবর দিই নি । অফিসে গিয়ে রেজিসটগরি করে বিয়ে, এস-সি মুখার্জির মেয়ে । চল, দেখবে এসো— হণত ইশারণ করে তাকে থামিয়ে দিয়ে বললে, “না, এখন নয় । বডড ঘুম পেয়েছে । ভগরি ক্লান্ত লাগছে জিতেন, হাত পা না-ছড়িয়ে পারছি না আণর । এই যে একটা খাট পড়ে আগছে—এটা কণর ? ভারী চমৎকার নেয়ারের খাট তো ; আমি শুয়ে পড়ি ।” জিতেন শান্ত, সেয়ানা মুখে হাসি ছুঁয়ে নিয়ে একে-একে ঘরের কড়া বাতিগুলো নিভিয়ে দিল সব ; টেবিলের ওপর নীল শেডের বাতিটা জ্বলছিল । জিতেন চেয়ারে ফিরে এসে বললে, ‘যেন আমার স্ত্রী তোমার বিজোড় ।” চশমা খুলে নিয়ে আড়ষ্ট চোখে নিশীথের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে উত্তরের প্রতীক্ষায় হয় তো এমনিই—বসে রইল সে । নিশীথ হোল্ড-অল খুলে বিছানার তোশক বালিশ চাদর বার করে নিয়ে একটা ময়লা কাপড় দিয়ে (9