পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/১৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেমন মজার একটা নেশা, ব্যথায় টুকুর-টুকুর করছিল যেন বুকের ভিতর, একটা জিনিস শুরু না-হতেই শেষ হয়ে ভালই হয়েছে বলে—নাকি কিছু ক্ষণ পরে শুরু হবে বলে ? বুঝে উঠতে পারছিল না যেন নমিতা । আস্তে-আস্তে খুব মৃদু প্রাণনায় সিগারেট টানতে লাগল। কোনো হেতু ছিল না । চানের ঘর থেকে সটান নিশীথের ঘরে ঢুকেছিল এমনিই সরল সরেস প্রাণের নির্লক্ষ্যে । নিশীথ জেগে অাছে কি না-জেগে অাছে—জেগে থাকলে ও-অবস্থার তার ঘরে ঢোকা উচিত নয়, ঘুমিয়ে থাকলে ঢুকলেও ঢোকা যেতে পারে ; এ সব কথা ভেবে দেখবার মত মনের অবস্থা ছিল না তার, এমনই বেগ ও আবেগের ঘন অণগুন ছুটে এসেছিল প্রাণের ভিতর নির্দেশষ প্রকৃতির থেকে । কিন্তু তার পর থেকেই মনে কেমন একটু দোষ এসে ঢুকেছে যেন । সেই জন্যেই সতর্ক হয়ে পড়েছে সে । বেশ সাবধানে সাধুতায় সতর্কতায় উইমেনজ অকসিলিয়ারি কোরের মিলিটারি পোশাক পরে এসেছে সে । যুদ্ধের সময় ওয়াকেতে কাজ করত সে, সেই থেকে এ রকম পোশাক পরার রেওয়াজটা রয়ে গেছে, আজিকালও অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নেয় এই পোশাক । সিগারেটটা শেষ হয়ে গেছে। অচেতন হয়ে ঘুমুচ্ছে নিশীথ । মনের মধ্যে নমিতার আফিমের গুলির মত একটা খুঁত এসে ঢুকেছে যেন, অনেক রাতঅবিদ-জাগা ডাক্তারের নির্গলিত নগ্নকান্তিবাদের লেকচার শোনা, পার্কসার্কাসের পেজপোলাও মাংস মদ খাওয়ার উত্তেজনায় প্রশ্রয় পেয়ে । এ ছাড়াও প্রশ্রয় পেয়েছে মন, এমনিই কোনো একটা সময়ে কোনো একটা জিনিস পেতে ভাল লাগে মনের । মনই যদি এ-কথা বলে, শরীর খোচা নাপেয়েও যদি শারীরিক হয়ে উঠতে চায়—যেমন আজি সন্ধ্যার সময় ড্রয়িংরুমে বসে বই পড়তে-পড়তে হয়ে উঠেছিল প্রায়, তা হলে—কঠিন । নমিতা আরএকটা সিগারেট জ্বালিয়ে নিল । নিশীথ ঘুমুচ্ছে নাক ন-ডাকিয়ে বেশ নিবিড়ভাবে, বাইরে রণত দুটো-অাড়াইটে অবিদ দুর্দশন্ত বাতাস খেলে গেছে আগজ ঘরের ভিতরটাকেও কঁাপিয়ে, নাচিয়ে, তৃপ্ত, স্নিগ্ধ করে গেছে । কিছু ক্ষণ হল বাতাস থেমে গেছে বাইরে-ভিতরে, একটা গাছের পাতাও নড়ছে না, গরমের হস্কা ঠিকরে পড়ছে যেন সাদা মৃেঘগুলোর ভিতর থেকে। অন্দরে ভীষণ গরম—যে ঘরের ফ্যান নেই। এ ঘরটাকে বড় জোরালে ফ্যানটা ঠাণ্ড করে ՏԵO