পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/১৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অামি দু-একটা তারা দেখাচ্ছিলাম তাকে, কিন্তু উৎসাহ দেখলাম না । আকাশে নক্ষত্রগুলো যে আছে সেটা সে জানে বটে, কিন্তু কখনো অনুভব করেছে বলে মনে হয় না ।” জিতেন অনুভব করেছে কিন্তু আপনাকে বলে নি । কী করে জানলেন আপনি ?—নমিত উচু তালবীথির কাঠকুড়োনির মত চোখে নিশীথের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল । নিশীথ কোনো উত্তর দিতে পারল না । অন্ধকারের ভিতর জলের মতন সহজ সত্য কোনো একটা জবাব হাতড়ে বেড়াতে লাগল। কিন্তু সে রকম স্বাভাবিক ও স্বীকার্য কোনো কিছু খুঁজে পাওয়া গেল না। ‘কী করে জানলেন আপনি ? ‘আমি নিজে তো অনুভব করি...রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতেথাকতে ।’ নমিত জানলণর ভিতর দিয়ে বাইরের দিকে চোখ ফিরিয়েছিল । বাইরে সমস্ত বাতাস নিঃশেষিত হয়ে গেছে । মেঘ নেই, অনেক তারা অাছে। ঘরের ভিতরে খানিকটা বাতাস আলোড়িত করে তুলবার জন্যে মেশিন যথাশক্তি দানবীয় কাজ করে চলেছে তার । ‘পৃথিবীর প্রথম মানুষ এক রকম ভাবে বুঝেছিল নক্ষত্রগুলোকে—শেষ মানুষেরা আর-এক রকম ভাবে বুধ বে। আকাশ-রাত্রি ও নক্ষত্রেরা রয়েছে তবুও সকলকেই সব কিছু দেখবার সুযোগ দিয়ে । আমরা দেখতে পারি শুধু, তার চেয়ে খুব বেশি আর নয় । কিন্তু যা দেখছি, হৃদয় যা দেখাচ্ছে তার চেয়ে আশ্চর্য কিছু নেই—এই অনুভব করি।” ‘আপনি তো করেন নিশীথবাবু । বলছেন । কিন্তু কথা হচ্ছিল জুলফিকারের, জুলফিকার কি অনুভব করে ? নিশীথ সোজা হয়ে বসতে-বসতে বললে, 'জুলফিকার নয় তো জিতেনের কথা হচ্ছিল।’ নমিত ভুল শুধরে হেসে বললে, যাচ্চলে—জিতেনের কথাই তো হচ্ছিল।’ ‘পির সাহেব কি জিতেনের মত ?’ ‘পির সাহেব ?—নমিতা নিশীথের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তার পর বললে, 'না, তার নিজেরই মত। একদিন দেখবেন তাকে, চলুন।