পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৪০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

'আমার খুব ভাল লাগছে ; কেমন নিশব্দ হয়ে আছে মানুষের পৃথিবী এখন । মানুষ মানুষের ভাল চাচ্ছে যেন, এমনই গভীর সহানুভূতি, শাস্তি, এই রাত্রির বাতাসে হগরীত—’ ‘কোনো অতীত পৃথিবীর কথা মনে পড়ছে তোমার ? অতীতে এ রকম শান্তি ছিল বুদ্ধদেবের সময়—আমাদের দেশের কোনোকোনো জায়গায় । তারো অাগে—চীনে | জেরুজালেমে—’ ‘এখনকার পৃথিবীর চেয়ে সে সব দেশ বিদ্যায় পিছিয়ে থাকলেও জ্ঞানে বড় ছিল, বেশি শান্তি ছিল তাই— ‘পৃথিবী তো এখন বিদ্যায়ও পিছিয়ে পড়ছে—চালাকি বেড়ে যাচ্ছে।’ "এই রকমই কি থাকবে মনে হয় তোমার ?’ ‘কিছু কাল থাকবে, বাতাস ও রাত্রির অন্ধকার স্নিগ্ধতার দিকে তাকিয়ে থেকে জুলেখা বললে । চমৎকার এই রাত্রির বাতাস । দুঃখ লোপ করা কঠিন, হয় তে অসম্ভব । কিন্তু দুঃখবাদ—হরেীত অন্ধকার ও বাতাসের অক্লান্ত অমিতাভ নৈরাজ্যের দিকে তাকিয়ে রইল ; অসাধ্য সাধনের যুগ পৃথিবীর থেকে অন্তৰ্হিত হয়েছে কি না অবাক হয়ে ভাবছিল । জুলেখা মনে-মনে ভাবছিল, কী অনির্বচনীয় এই রাত্রির বাতাস, আমি অদিতি যেন—অনেক দেবতার মা, হাতে অনেক কাজ অপমার, অামার প্রেমিকের, আমার সন্তানদের, আমাদের পৃথিবীর । ‘পৃথিবী আমাদের চেয়ে বড়, সময় আরো বড়, তবুও আমরা আছি, চিন্তা করছি, ভাল চাচ্ছি।’ স্নিগ্ধ বাতাসের ভেতর বসে থেকে নিরবচ্ছিন্ন অণকাশের অনেক তারার ভেতর কাকে খুঁজছিল জুলেখা ? স্বাতীর দিকে যেন তাকিয়ে আছে হারাত ; অত বড় আকাশের পথে জীবনের অকিঞ্চিৎকর কণিকার মত স্বাতী তারাটাকে খুঁজে পেয়েছে হরীত ? মানব সফল হতে চাচ্ছে বলেই মানুষকে সফল করবার জন্যে আছে একটা ইচ্ছা, চেষ্টা, জুলেখা বললে, ‘খুব সম্ভব হাজারে এক জন কি দু-জন হলেও এটা চাচ্ছে মানুষ, আমাদের মতন এ রকম ভয়ঙ্কর পতনের যুগেও, ওরা দু-এক জন হতে পারলে বাকি আরো অনেকে হতে পারবে হরীত ? ᏬᏚ8