পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৪২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গেলেও তাহার মগজায় রস আসে। কাজেই জলের মত তরকারি ঝোলের দিকে তাকাইয়া কত কী কথা ভাবিতাম, মার কথা মনে হইত, চারুর কথা, তোমার কথা-— - ভাবিতাম অনুপমা আমার বধু ; সে যদি এখানে থাকিত তাহা হইলে এই জিনিস কি অণর হইত ? ভাল করিয়া স্বামীকে রাধিয়া খাওয়াইবার জন্যই যে তোমাদের জীবন সে কথা আমি বলিতে চাহি না । কিন্তু হিমাংশুর মার হাতে তৈরি ডাল, তরকারি ও কাদা ভাতের নমুনা যদি তুমি দেখিতে, দেখিতে যদি যে সব কিছুতেই লবণ ও কাচা লঙ্কা ঘষিয়া খাইতে হইতেছে তাহা হইলে দুর হইতে সহানুভূতি বোধ করিতে নিশ্চয় । আমাদের খাওয়া-দাওয়ার সুব্যবস্থার জন্যই নয়, তোমার মনে সমবেদন জাগাইবার জন্যই এক-একবার ইচ্ছা হইত তোমাকে এখানে আসিতে বলি, মনে হইত, অনুপমা আসিয়া দেখিয়া যাক, একদিন পোড়া ভগত ও একদিন ভগতের লপসি ও আঁশটে কাচা ট্যাংরা মাছের uঝাল দিয়া, কেমন করিয়া দিন কাটাইতেছি আমরা । কিন্তু তবুও তোমাকে, মাকে, চারুকে কিছু লিখিলাম না আর । তোমাদের সহানুভূতির মমতা লইয়। খেলা করিবার এই যে সাধ, এই যে নমনীয়প্রবণ হৃদয়, ইহার বহির্মুখিনতার কথা ভাবিয়া বড় লজ্জিত হইলাম । নমনীয় প্রবণ মন যেন হাটে-বাজারে উথলাইয়া উঠিয়া বন্যার ঝলসানি না আনে, যেন অন্ধকার শিরার ভিতর ঢুকিয়া, নিভৃত উপশিরায় লুকাইয়া, জীবনকে সজীব রাখে সবুজ রাখে—শান্তি দান করে যেন, যেন গভীর শান্তি পায় । শুনিয়া তুমি হয় তো ঠোট কুঁচকাইতেছ—ভাবিতেছ, সামান্য খাওয়া-দাওয়া লইয়াই এত কথা ফণদিয়া বসিলাম । মীর হাতের মোলায়েম রান্না খাওয়ার চিরদিনের অভ্যাস ; বিবাহের আগের দিন পর্যন্তও মা কাছে বসিয়া বাতাস দিয়া সাধিয়া-সাধিয়া খাওয়াইতেন । তার পর ভাবিলেন, তুমি আসিয়াছ, তাই সরিয়া পড়িলেন । সহসা তোমাদের • • •হীন নিস্তব্ধ বাড়ির ভিতর হিমাংশুর মাকে আবিষ্কার করিয়া আমার চক্ষু স্থির হইয়া গেল। অবিশ্ব্যি কয়েক দিনের জন্য মাত্র । এখন স্বাভাবিক চোখ ফিরিয়া পাইয়াছি । হিমাংশুর মা যা খাইতে দেয়, তাহা পাইয়াই পরিতৃপ্তি । আমার এ নবীন তৃপ্তির কথা শুনিয়া তুমিও যে বেদনা পাইবে না, খুশিই হইবে, সেই জন্যেই এত কথা তোমাকে লিখিলাম। কথার পর কথা তোমাকে জানাইয়া সুখ আছে খুব ; জগনি 8ఏవ