পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

একান্ত তৎপর দেখেছি তাঁকে। বিদেশীরা তাঁর গৃহে স্বগৃহের মত আরাম ও যত্ন পেত। একজন নরুইজিয়ান থীস্ট অর্থাৎ ব্রাহ্ম একবার কলকাতায় আসেন। গরীব, অর্থসম্বল বিশেষ নেই। আমাকে বলে তাকে আমায় ফ্রেঞ্চ পড়াবার জন্যে রাখালেন। কিছুদিন পরে কঠিন কলেরা হল তার। সেই সময় সরলা রায় তাকে যেভাবে নার্স করলেন—না দেখলে অনুমান করা যায় না। বেচারাকে কিন্তু বাঁচাতে পারলেন না। মৈসোর থেকে রামস্বামী আয়েঙ্গার এসে তাঁরই বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছিলেন। অতুলপ্রসাদ সেনের বোনের সঙ্গে তার বিবাহবন্ধন তিনিই বেঁধে দেন। গোখলে আর এক বিদেশী তাঁর আতিথ্য-নিগড়ে ধরা পড়লেন। শেষাশেষি কলকাতায় এলেই সরলা রায়ের গৃহই গোখলের আবাসস্থান হত। গোখলের সঙ্গে তাঁর সম্প্রীতির চরম নিদর্শন “গোখলে মেমোরিয়াল স্কুল"।

 এ সব অনেক পরের ঘটনা। আমার পঠদ্দশাতেই খুসীর সঙ্গে তাদের বাড়ি আনাগোনায় তার বড় দিদির সঙ্গে আমার বেশ বন্ধুত্ব হল। দুর্গামোহন দাস ও চন্দ্রমাধব ঘোষ এই দুই পরিবারের সঙ্গে আমার সৌহার্দ্য বৃদ্ধিতে আমার মায়ের অনুমোদন ত রইলই, তিনি নিজেও সংযুক্ত হলেন। সরলাদিদি সখি-সমিতির একজন উৎসাহী মেম্বর হলেন। দিদিমণিরাও হলেন।

 একবার পূজার ছুটিতে ডাক্তার পি কে রায় ও মিসেস রায় মাদ্রাজ হয়ে মহীশূরে যাত্রার সংকল্প করলেন—রামস্বামী আয়েঙ্গার এ বিষয়ে তাঁদের উৎসাহদাতা। সরলাদিদি আমায় বললেন—‘‘যাবে সরলা আমাদের সঙ্গে? চল না।” আমি বললুম —“মা-রা কি যেতে দেবেন।” তিনি বললেন —“আমি বলে মত করিয়ে নেব।” সেকালে জলপথে ছাড়া মাদ্রাজ যাওয়া যেত না। আমি কখনো সমুদ্র দেখিনি, জলযাত্রাও করিনি। এ ভয়ানক সুযোগ—ওঁদের মত অভিভাবকের সঙ্গে যাওয়া। মা-বাবামহাশয় অনুমতি দিলেন। এই প্রথম বড় স্টীমারে চড়লুম আমি। এর আগে গঙ্গায় নতুনমামার ‘সরোজিনী’ বোটে মেজমামীদের সঙ্গে জলের উপর বাস কখনো কখনো করেছি। স্থির ধরণীর বক্ষে স্থল-বাস ছেড়ে, কূলে বাঁধা তরণীর বক্ষে জলবাসের স্বাদ পেয়েছি। নিঝুম রাত্রে কোন স্টীমার বা বড় নৌকার ধাক্কায় যখন আমাদের বোট হঠাৎ দোলায়িত হয়ে উঠে তখন ঘুম ভেঙে অন্যান্য নৌকা থেকে মাঝিরা নানারকম কলরব করে, তাদের কণ্ঠধ্বনি-মুখরিত আকাশের স্পর্শ পেয়ে

৮৭