পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করে উঠত। স্টুয়ার্ডেস অনেক ভুলিয়ে ভালিয়ে আমাকে একটু কিছু খাওয়াত। এই খাওয়ার প্রাচুর্যের জন্যেই অনেক সাহেব-মেম সমুদ্রযাত্রায় যেতে চায়। যাতায়াতের কয়লা খরচের চেয়ে খাবার যোগানতেই স্টীমার কোম্পানীর বেশি খরচ হয়। তাই খাবারের দামটা ভাড়ার অন্তর্গত। খাও আর না খাও—খাবারের দামটা ভাড়া থেকে কাটান যায় না।

 চতুর্থ দিনে মাদ্রাজের উপকূল দেখা গেল। বন্দরের কাছাকাছি পৌঁছিল জাহাজ। এবার জাহাজ থেকে তীরে পৌঁছতে ‘কাটামারন’ নামে এক জাতীয় দিশী নৌকার আশ্রয় নিতে হবে। জাহাজ থেকে কাছি ধরে খালাসিদের সাহায্যে কোনরকমে তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাইতে বাহিত হয়ে তীরে উঠতে হবে। তাতে ঝাঁপান, ঝাঁপিয়ে পায়ের ব্যালান্স রেখে দাঁড়ান বা বসা—এসবই মারাত্মক ব্যাপার। এ ‘কাটামারন’ কিন্তু মারণ উচাটনের দ্বারা কোন যাত্রীর কোনদিন অপঘাত মৃত্যু ঘটায়নি। মাদ্রাজের বন্দরে আর কোন উপায়ে সেকালে যাওয়া অসম্ভব ছিল—উপকূলের সমীপস্থ জল ভীষণ দুরন্ত—তার বশীকরণ এই কাটামারনের দ্বারাই নির্বিঘ্নে হত। আমাদের অভ্যর্থনা করতে কূলে দাঁড়িয়েছিলেন বাঙালী বন্ধু—রজনী রায় মহাশয়—মাদ্রাজের তদানীন্তন একাউণ্টাণ্ট জেনারেল। তিনি দাস পরিবারের বিশেষ বন্ধু—তাঁর স্ত্রী বিধুমখী দেবী সুশীলাদিদির সম্পর্কে আমার সঙ্গে সম্পর্কিত। তাঁদের ওখানে আট-দশদিন কাটল আমাদের। রজনীবাবু তাঁর মাদ্রাজী বন্ধুদের পালা করে প্রতিদিন নিমন্ত্রণ করতে লাগলেন। আমাদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেবার জন্যে। এঁরা কিন্তু সবাই প্রায় শিক্ষিত খ্রীস্টান বা ব্রাহ্মসমাজী। তাঁদের হিন্দু উচ্চশ্রেণীর কোন মাদ্রাজী বন্ধু দেখলুম না। মাদ্রাজের হিন্দুরা তখন অত্যন্ত গোঁড়া।

 রজনীবাবুদের হাতায় একজন সাধারণ মাদ্রাজীর গান শুনতে পেয়েছিলুম একদিন। আমার আর কাজকর্ম নেই—তাকে বাড়ির বারান্দায় ডাকিয়ে তার দুই একটা গান শিখে নিলুম, একটা হচ্ছে—

“বারুং নালুঙ্গুড়া কৈধঁন্নি লে
বাসুদেব কি বরপুত্র!
রত্নসিংহাসন তল রাজয়ি রূপরিন্না
রি—রি—রি—রি—রি!”

 কথা আমাদের পক্ষে উৎকট—কিন্তু সুর চমৎকার। একদিন ডিনার পার্টিতে সমাগত মিস্টার রায়ের মাদ্রাজী অতিথিদের তাঁদের দেশের

৮৯